ডেমরায় আগুন লাগা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ভবনের যে অবকাঠামোগত শক্তি সেটা আর নেই। একেবারে কমে গেছে। ভবনটির এক জায়গায় ছাদ ফেটে যাওয়ায় যেকোনো মুহূর্তে তা ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ইনসিডেন্ট কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেজাউল করিম।
শুক্রবার আগুন লাগার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
ডেমরার ভাঙ্গা প্রেস এলাকায় কাপড়ের গুদামে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় লাগা আগুন ৮ ঘণ্টা চেষ্টার পর নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায়। পরে শুক্রবার সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলা হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১০ ইউনিট আগুন নির্বাপণে কাজ করেছে। আগুন নেভাতে গিয়ে কয়েকজন ফায়ার ফাইটার আহত হয়েছেন।
কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘ভবনটি নির্মাণে কোনো ধরনের নীতিমালা মানা হয়নি। এখানে নেই ফায়ার এক্সিট, ভেতরে ঢোকার সিঁড়িও খুবই সংকীর্ণ। পাশের অন্য ভবন থেকে পানি দেওয়ার সুব্যবস্থাও নেই। এখানে ভবনগুলো সব লাগোয়া। ভবনটির নিচে নেই নিজস্ব কোনো ওয়াটার রিজার্ভ। এখানকার ভবনগুলো পাশাপাশি, ঘন ঘন ও লাগোয়াভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। যেটি এখন জ্বলছে তার ঠিক পূর্ব পাশের ভবনটিও লাগোয়া। একই দেয়াল, এক ইঞ্চিও ফাঁকা নেই। যে কারণে আমরা ভবনটির পূর্ব পাশ দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে পানি দেওয়াসহ সব ধরনের কাজ করতে কষ্ট হয়েছে।’
ভবনটি নিয়ম মেনে নির্মাণ বা নির্মাণের অনুমোদন ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে জানাতে পারব। যে ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে আদৌ কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল কি না। আমরা ভবনটির গ্রিল ও দেয়াল কেটে জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে মালামাল সরিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমাদের কাছে যৎসামান্য থাকা পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি।’
ইনসিডেন্ট কমান্ডার বলেন, ‘ভবনটি ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। আমরা ভবনটির ভেতরে প্রবেশ করে দেখেছি ভবনের যে অবকাঠামোগত শক্তি সেটা আর নেই। একেবারে কমে গেছে। ভবনটির এক জায়গায় ছাদ ফেটে গেছে। যে কারণে যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাঠামোগত শক্তি একেবারেই হারিয়েছে ভবনটি।’
আগুনের সূত্রপাত ট্রান্সমিটার থেকে: ফায়ার সার্ভিস
ডেমরার ভাঙাপ্রেস এলাকায় ক্রীড়াসামগ্রীর গুদামে লাগা আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল ট্রান্সমিটার থেকে। ভবনটির পাশে একটি ট্রান্সমিটার বিস্ফোরিত হয়ে দোতলায় লাগা আগুন দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। এমনটাই ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ) লে. কর্নেল মো. রেজাউল করিম বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভবনটি এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, আমরা তা ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করছি। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনো অনুমান করা যাচ্ছে না।’
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলেন, ‘ক্রীড়াসামগ্রীর গুদাম হিসেবে ব্যবহার করায় সেখানে কোনো মানুষ থাকত না। তাই আগুনে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেলেও সেখানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে লে. কর্নেল মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘রাতে গোডাউন বন্ধ থাকায় এই আগুনের ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।’