ছাত্রদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। দলটি প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’কে পছন্দের তালিকায় প্রথমে রেখেছে। তবে এটাকে জাতীয় প্রতীক আখ্যায়িত করে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, জাতীয় প্রতীক কীভাবে একটি দলের প্রতীক হবে। এছাড়া আগে কোনো কোনো দল এই প্রতীকটি চেয়েছিল। তখন তাদের দেওয়া হয়নি।
তবে সবশেষ খবর হলো, নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত প্রতীকের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। সেখানে ‘শাপলা’কে প্রতীক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনি কোনো বাধা না থাকলে চূড়ান্ত তালিকায় এই প্রতীকও থাকবে। এতে নতুন দল এনসিপি ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (২৩ জুন) ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র ঢাকা মেইলেকে প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’কে প্রস্তাবে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ইসি সূত্র জানায়, বারবার বিধিমালা সংশোধনের জটিলতা এড়াতে সংসদ নির্বাচনের তফসিলভুক্ত প্রতীকের সংখ্যা বাড়াতে কমিশন নির্দেশনা দিয়েছিল। সে আলোকে কার্যক্রম শুরু হয়। যার মধ্যে আগের ৬৯টি প্রতীকসহ নতুন করে শাপলা ও দাঁড়িপাল্লাসহ ৫০টির মতো প্রতীক যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে কলম, কলা, চেয়ার, টেবিল, লাইটসহ হরেক রকমে প্রতীক আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতীকের তালিকা তৈরি করে কমিশনে পাঠিয়ে দিয়েছি। কমিশন অনুমোদন করলে তা চূড়ান্ত হবে।’
‘শাপলা’ নির্বাচনী প্রতীকের তালিকায় রাখা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসি কর্মকর্তা ঢাকা মেইলেকে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রতীকের যে তালিকাটা আমরা করেছি সেখানে শাপলা প্রতীক আছে। আমরা সেটি রাখার চিন্তা করছি। আইনে কোনো বাধা না থাকলে আমরা তা রাখব।’
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থা অনুবিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য বর্তমানে যে ৬৯টি তফসিলভুক্ত প্রতীক রয়েছে তার মধ্যে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নেই। এটিসহ আরও ৩১টি নতুন প্রতীক যুক্ত করার পরিকল্পনা আমরা করছি। প্রতীকের সংখ্যা ১০০টি বা এর বেশি বা কম হতে পারে। তবে আমরা প্রতীকের সংখ্যা বাড়াব।’
তবে কোন ধরনের প্রতীক নির্ধারণ করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা।
নির্বাচনী প্রতীক বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তফসিলে যে প্রতীকগুলো ছিল সেখান থেকে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে বরাদ্দ দিতে দিতে কমে গেছে। এজন্য আমরা একসঙ্গে প্রতীকের সংখ্যা বাড়িয়ে সব প্রতীককে একটি তফসিলে রাখব। যাতে বারবার আমাদের পরিবর্তন করতে না হয়। কারণ আমি যদি দুটো তফসিলে প্রতীক রাখি, একটি রাজনৈতিক দলের জন্য আরেকটি স্বতন্ত্রের জন্য, তাহলে আগামীকাল আরেকটি নতুন দল নিবন্ধন পেলে কিন্তু আমাদের দুটি তফসিলই সংশোধন করতে হবে। আর তফসিল সংশোধন মানে হলো বিধি সংশোধন। আর এটি লম্বা প্রক্রিয়া। তারচেয়ে বরং একই জায়গায় ১০০টি প্রতীক যদি থাকে, তাহলে যেগুলো রাজনৈতিক দলের জন্য বরাদ্দ হয়েছে সেগুলো ছাড়া অবশিষ্ট প্রতীক থেকে স্বতন্ত্ররা করবে। এতে বারবার আমাদের তফসিলও পরিবর্তন করা লাগবে না। বিধি বারবার সংশোধন এড়ানোর জন্য প্রতীক বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
এর আগে রোববার (২২ জুন) নিবন্ধন আবেদন ইসিতে জমা দেয় জাতীয় নাগরিক পার্টি -এনসিপি। আবেদন জমা দেওয়া কার্যক্রম শেষে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ শীর্ষ কয়েকজন নেতা সাক্ষাৎ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। সাক্ষাৎ এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শাপলা পেতে আইনে কোনো ধরনের সমস্যা নেই আমরা দেখেছি। তাই আমরা আবেদন করেছি। কোনো ধরনের আইনগত সমস্যা আমরা দেখি না।
নাহিদ বলেন, নিবন্ধনের জন্য সব শর্ত পূরণ করে কাগজপত্র দাখিল করেছি। গঠনতন্ত্রসহ আমরা আবেদন জমা দিয়েছি। আমরা তিনটি মার্কার জন্য আবেদন করেছি, শাপলা, কলম ও মোবাইল। আমরা আশাবাদী শাপলা মার্কা পাব এবং তা নিয়ে জনগণের মাঝে কাজ করব।
ইসির তফসিলভুক্ত ৬৯টি প্রতীকের মধ্যে ৫০টি প্রতীক বরাদ্দ রয়েছে রাজনৈতিক দলের জন্য। যার মধ্যে স্থগিত হওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরও প্রতীক রয়েছে। অবশিষ্ট ১৯টি প্রতীক রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের, যা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিলভুক্ত প্রতীক ছিল ৬৫টি। যার মধ্যে ৪০টি প্রতীক ছিল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জন্য। আর নতুন দল নিবন্ধন বিবেচনায় রেখে অতিরিক্ত ২৫টি প্রতীক রাখা হয়েছিল।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিলভুক্ত প্রতীকের সংখ্যা ছিল ৬৪টি। ৩৯টি প্রতীক বিভিন্ন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জন্য বরাদ্দ ছিল এবং ২৫টি প্রতীক স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নতুন দলের ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
সবশেষ ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিলভুক্ত প্রতীকের সংখ্যা ছিল ৬৯টি। ৪৪টি প্রতীক বিভিন্ন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জন্য বরাদ্দ ছিল এবং ২৫টি প্রতীক স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নতুন দলের ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।