টেস্ট ম্যাচ খেলতে ঢাকায় ফিরছেন না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
এর আগে তার শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলতে ঢাকায় আসবেন বলে জানালেও ছাত্র আন্দোলনে তার ভূমিকার জন্য জনরোষের আশঙ্কায় তিনি আসছেন না বলে জানান।
এর ফলে কানপুরে অনুষ্ঠিত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সিরিজের টেস্টটিই ছিল সাকিবের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট।
কানপুরে সেই ম্যাচের আগে সাকিব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
ঢাকায় দেশের দর্শকদের সামনে তার শেষ টেস্ট খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, কিন্তু সেই ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রানজিট স্টপেজে থাকা সাকিব নিজের পরিকল্পনা পরিবর্তনের কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমার দেশে ফেরার কথা ছিল, কিন্তু এখন নিরাপত্তাজনিত কারণে, নিজের নিরাপত্তার কারণে আমি হয়তো তা করতে পারব না।’
এটা দৃশ্যমান যে, সাকিবের দেশে ফেরা নিয়ে চলমান বিক্ষোভের কারণে তার পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন একদল শিক্ষার্থী।
আরেক দল সাকিবকে স্টেডিয়ামে ঢুকতে না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিসিবিকে চিঠি দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সাকিবের নীরবতার কারণেই শিক্ষার্থীদের এ প্রতিরোধ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন পতনের আগে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত কমপক্ষে ১ হাজার জনকে হত্যা করে।
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেলিব্রেটি ক্রিকেটার হওয়া সত্ত্বেও সাকিব আন্দোলনের সময় নীরব ছিলেন। এর কারণে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
তারা আশা করেছিলেন, সাকিব তাদের পাশে দাঁড়াবেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য সাকিব আন্দোলন চলাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের হাসিখুশি ছবি পোস্ট করেন, যা তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উসকে দেয়।
কানপুরে অবসরের ঘোষণা দেয়ার সময় সাকিব দেশে ফেরার পর নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
ঢাকায় অবস্থানকালে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানান তিনি, কিন্তু বোর্ড ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক আসিফ মাহমুদ।
পরে ক্রীড়া উপদেষ্টা জানান, সাকিব দেশে ফিরলে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন তারা, তবে সাকিবের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় সরকার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে।
সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বুধবার রাতে নিশ্চিত করেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সাকিবকে তার দেশে ফেরার পরিকল্পনা বাদ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এ অবস্থা থেকে বোঝা যায়, সাকিবের টেস্ট ক্যারিয়ার এখন হয়তো অনানুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়ে গেছে।