বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের সমতল জনপদে বসবাসরত মণিপুরি সম্প্রদায় তাদের শিল্প, সংস্কৃতি ও কারুশিল্পের জন্য অনন্য। এর মধ্যে মণিপুরি তাঁতের শাড়ি (Manipuri Handloom Saree) শুধু একখণ্ড বস্ত্র নয়, বরং এক জীবন্ত ঐতিহ্যের প্রতীক। সুতার রঙে, নকশার বুননে, এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হস্তান্তরিত কৌশলে ফুটে ওঠে মণিপুরি নারীদের সৃজনশীলতা ও নান্দনিক বোধ।
সাম্প্রতিক কালে মণিপুরি তাঁতিরা তাদের ওড়নার নকশা ও রঙের ছোঁয়ায় তৈরি করা ‘মণিপুরি শাড়ি’ দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং বহু মণিপুরি নারী আত্মনির্ভরতার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি পন্যটি GI সনদও লাভ করেছে।
তবে ইদানিং দেখা যাচ্ছে, এই ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি শাড়ি ভয়াবহভাবে নকলের কবলে পড়েছে। বাজারে ‘মণিপুরি শাড়ি’ নাম ব্যবহার করে অনেক প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের যান্ত্রিক কাপড় বিক্রি করছে। ফলে ক্রেতারা আসল ও নকল পার্থক্য করতে পারছেন না, আর প্রকৃত মণিপুরি তাঁতিরা হারাচ্ছেন তাদের ন্যায্য বাজার ও পরিচিতি।
নকলকারীরা রংপুরের রৌমারিসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিম্ন মানের সুতা দিয়ে কম খরচে চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা মেশিনে তৈরি নকল কাপড়কে ‘মণিপুরি’ বলে চালাচ্ছে। এতে ঐতিহ্যবাহী হস্ততাঁতের বাজার ধ্বংসের মুখে পড়ছে। মূল শিল্পীরা হতাশ হয়ে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন যৌথভাবে পদক্ষেপ নিতে পারে—
আসল মণিপুরি তাঁতের পণ্যকে ‘Geographical Indication (GI) Tag’ প্রদান করা,
বাজারে নকল পণ্যের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো,
স্থানীয় তাঁতিদের প্রশিক্ষণ, সহজ ঋণ ও বিপণন সুবিধা দেওয়া,
এবং মণিপুরি তাঁতপল্লীগুলোর জন্য সরকারিভাবে ব্র্যান্ড সার্টিফিকেশন চালু করা।
এভাবে প্রশাসনিক ও নীতিগত উদ্যোগ নিলে শুধু মণিপুরি শাড়ির ঐতিহ্যই রক্ষা পাবে না, হাজার হাজার গ্রামীণ তাঁতির জীবিকাও টিকে থাকবে।
মণিপুরি শাড়ি শুধু একটি পণ্য নয়, এটি জাতির ঐতিহ্যের অংশ। প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ ও সমাজের সচেতনতা দিয়ে যদি এই ঐতিহ্য রক্ষা করা যায়, তবে বাঁচবে এক অমূল্য সংস্কৃতি ও হাজারো কারিগরের জীবিকা।
মো. আব্দুস সামাদ,লেখক ও গবেষক// abdusjuly@gmail.Com