মানুষ তার পঞ্চ-ইন্দ্রিয় দিয়ে এ পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধের স্বাদ আস্বাদন করে। গোলাপের ঘ্রাণ, নতুন বইয়ের গন্ধ কিংবা কফির মন তাজ়া করা গন্ধ কার না ভালো লাগে! অথবা প্রচুর পরিশ্রম বা মন খারাপের দিনে হঠাৎ কোনো প্রিয় সুগন্ধ নিমিষে কাটিয়ে দিতে পারে ক্লান্তি অথবা মন ভরিয়ে তুলতে পারে প্রশান্তিতে। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দুর্ভাগা মানুষ রয়েছেন, যাদের ঘ্রাণশক্তি নেই। এ অসুখের নাম অ্যানোসমিয়া। এই রোগ হলে রোগীর ঘ্রাণের কোনো অনুভূতি থাকে না।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সারা বিশ্বে এই রোগের প্রতি সচেতনতা বাড়াতে পালন করা হচ্ছে বিশ্ব অ্যানোসমিয়া সচেতনতা দিবস। ২০১২ সাল থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি অ্যানোসমিয়া সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। ড্যানিয়েল শেইন নামের একজন আমেরিকান ব্যক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিনের ঘোষণা দেন। তিনি নিজেও ঘ্রাণের অনুভূতিজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
দৃষ্টি বা শ্রবণশক্তির মতো ঘ্রাণশক্তিও মানুষের এক বিশেষ ক্ষমতা বা চেতনা। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে জটিল স্নায়বিক ও শারীরবৃত্তীয় অনুভূতি। আমরা নাকে গন্ধ পাই অলফেক্টরি নামক একটি নার্ভের মাধ্যমে। এটি আমাদের নাকের উপরি অংশে ছড়ানো রয়েছে। যা সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত। কোনো কারণে এই নার্ভটি অকার্যকর হয়ে গেলে, আমরা কোনো গন্ধ পাই না। অনেক সময় নাকে পলিপ বা অন্য কোনো বাধার কারণেও ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে যেতে পারে। অ্যানোসমিয়ার কারণে অনেক সময় স্বাদ, গন্ধ এই দুয়েরই অনুভূতি চলে যেতে পারে। আর ঘ্রাণ না পেলে আমাদের জিহ্বার ‘টেস্ট বাড’ যা স্বাদ পেতে সাহায্য করে, তা-ও অকার্যকর হয়ে যায়। ফলে একই সঙ্গে নাকে ঘ্রাণ না পেলে মুখে স্বাদও পাই না।
অ্যানোসমিয়া স্থায়ী বা অস্থায়ী দুই ধরনের হতে পারে। অস্থায়ী অ্যানোসমিয়া সব বয়সের মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। অনেকের ক্ষেত্রে জন্মগত অ্যানোসমিয়া থাকে। কিন্তু সেই সংখ্যাটা নেহাতই অল্প। সর্দি, সাইনাস, অ্যালার্জি এবং ঠাণ্ডা লাগার ধাত থাকলে অ্যানোসমিয়া হতে পারে। বলা যায়, এই অসুখ অনেকটা সর্দি-কাশির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই উপসর্গগুলোর স্থায়িত্ব বেশিক্ষণ হয় না।
আমাদের গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা বেঁচে থাকার জন্য খুবই জরুরি। চারপাশের পরিবেশকে আমরা এর মাধ্যমে বুঝতে পারি। নষ্ট খাবার চেনার জন্য ভূমিকা রাখে গন্ধ। আগুনের পোড়া বা গ্যাসের লিকেজের গন্ধ আমাদের সতর্ক করে দেয় আসন্ন বিপদ থেকে। অ্যানোসমিয়া বিপজ্জনক না হলেও এখান থেকে অনেক রকম স্বাস্থ্য সমস্যাও তৈরি হতে পারে।