মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রেমিকা বিশ্বমনি হত্যার ঘটনায় রনজিত সাঁওতাল (২১) নামের তার প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। সে উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের উদনাছড়া চা বাগানের ৮নং বস্তির শংকর সাওতালের পুত্র এবং একই চা বাগানের ইলেকট্রিশিয়ান।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে ঘটনার সাথে জড়িত রনজিতকে গ্রেফতারের পর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. মোবারক হোসেন খাঁন সাংবাদিকদের জানান।
হত্যার শিকার বিশ্বমনি দাস (২৫) উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের উদনাছড়া চা বাগানের ৮নং বস্তির মৃত লক্ষীন্দর দাসের মেয়ে। সে নিরালা খাশিয়া পুঞ্জিতে শ্রমিকের কাজ করতো। এব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে ভিকটিমের ভাই সুকমার দাশ (২২)।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আরো জানান, গত মঙ্গলবার ভোররাতে রনজিত সাঁওতালকে তার নিজ এলাকার একটি বিয়ে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে গত (৭ ডিসেম্বর) বিশ্বমনি দাশের মৃতদেহ উদনাছড়া চা বাগানের ১১ নং সেকশন থেকে উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো জানান, হত্যার শিকার বিশ্বমনি দাশের সাথে রনজিত সাওতালের দীর্ঘ দিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেম থেকে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। এক পর্যায়ে বিশ্বমনি গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। রনজিত পেটের বাচ্ছা গর্ভপাত ঘটাতে বিশ্বমনি ওষুধ কিনে দেয়। তাতে কাজ না হওয়ায় আবারও বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং বিয়ে না করলে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেয় বিশ্বমনি।
তিনি জানান, হত্যাকান্ডের দিন গত (৫ ডিসেম্বর) সকল সহকর্মীদের সাথে বিশ্বমনি দাস কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিরালা খাশিয়া পুঞ্জিতে যায়। ওই দিন বিকেলে বাড়ী ফেরার সময় উদনাছড়া চা বাগানের ১১নং সেকশনের ভাঙ্গা ব্রীজ এলাকায় পৌঁছলে সহকর্মীদের বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে তাদেরকে চলে যেতে বলে। সহকর্মীরা চলে যাওয়ার পর সে প্রেমিক রনজিত সাঁওতালের সাথে দেখা করে এবং আবারো বিয়ের করার প্রস্তাব দেয়। রনজিত বিয়ে করতে অপারগতা প্রকাশ করলে সাথে থাকা বিষ পান করে বিশ্বমনি । বিষপানের পর মুখে ফেনা আসে এবং জোরে জোরে শব্দ করতে থাকে। এসময় রনজিত তাকে গলায় ওড়না পেছিয়ে বাগানের ভিতরে টেনে নিয়ে যায় এবং একটি গাছের সাথে বেঁধে রাখে।
ঘটনার পর বিশ্বমনিকে খুঁজে না পেয়ে বাগানের বিভিন্ন সেকশনে খুঁজ করতে থাকে পরিবারের সদস্যরা। এক পর্যায়ে গত (৭ ডিসেম্বর) তার লাশ উদনাছড়া চা বাগানের ১১নং সেকশনের ভিতরে একটি গাছের নীচে ওড়না দিয়ে গলায় বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে এবং ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে র মর্গে প্রেরণ করে।
তিনি জানান, রনজিত সাঁওতালকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে পুরো বিষয়টি স্বীকার করে এবং বিশ্বমনির মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বলেও থানা পুলিশকে জানায়।#