বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম :
দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াত কমলগঞ্জে মানবাধিকার সুরক্ষা ও সামাজিকভাবে বঞ্চিত দারিদ্র্য বিমোচন ও বিদ্যমান বৈষম্য লাঘব প্রকল্পের আওতায় প্রকল্প পরিচিতি সভা কমলগঞ্জে স্বাস্থ্য সহকারীদের ৬ দফা দাবিতে দুই ঘন্টা অবস্থান কর্মসূচি মৌলভীবাজারে ৩৬ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় চোরাই পন্য জব্দ, কাভার্ড ভ্যানসহ আটক ৩ সীমান্তে বিএসএফের পুশইন অব্যাহত, রোহিঙ্গাসহ ১৬ জন আটক প্রাপ্ত ঋণের ৬৭ ভাগই গেছে বকেয়া পরিশোধে সাবেক সিইসিকে হেনস্তায় জড়িতদের বিচার চান রিজভী প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা’ যুক্ত করছে ইসি! সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা এবার সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেফতার

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির খবরে বাজারে কিছুটা স্বস্তি

প্রতিদিনের মৌলভীবাজার ডেস্ক / ৫৪ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

বাঙালির ঘরে বিভিন্ন পদের খাবার রান্নায় পেঁয়াজের ব্যবহার হবে না এমনটা ভাবাই যায় না। খাবারকে সুস্বাদু করতে এই মসলাজাতীয় পণ্যটি ব্যবহার করা হয়। পেঁয়াজ এতই জনপ্রিয় ও অত্যাবশ্যকীয় একটি পণ্য যে বাজারে এর দাম বাড়লে দেশব্যাপী হইচই শুরু হয়ে যায়।

পবিত্র রমজান মাসে মুখরোচক নানা ধরনের ইফতার সামগ্রী তৈরিতে পেঁয়াজের ব্যবহার কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আসন্ন রোজাকে সামনে রেখে চাহিদা অনুযায়ী পণ্যটির সরবরাহ বৃদ্ধিতে সরকার আগেভাগেই নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে ভারত সফরের সময় রমজান মাসের আগে বাংলাদেশের বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশে পেঁয়াজসহ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছিলেন।

ভারত সে অনুরোধের প্রতি সম্মান দেখিয়ে নিজেদের বাজারে পেঁয়াজের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও শুধু বন্ধুত্বের কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে রাজি হয়েছে। এ ছাড়া কলকাতায় পেঁয়াজের দাম এখন এক শো রুপি ছুঁই ছুঁই।

এদিকে দিল্লির পেঁয়াজ রপ্তানির সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য সুখবর নিয়ে এসেছে। বাজারেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। ভারতের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের কূটনৈতিক জয় হিসেবেই দেখছেন বিশিষ্টজনরা। ভারত চিনিও রপ্তানি শুরু করতে পারে শিগগিরই।

বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানিয়েছেন, ‘ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে। পেঁয়াজ আমদানির আগে এই খবরই গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দাম কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের। এর আগে পেঁয়াজ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে বসেছিল। বর্তমানে রাজধানী ঢাকাতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ১২০-১৩০ টাকা প্রতি কেজি। অর্থাৎ দাম কমছে। তাও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ার আগেই। শুধু খবর পৌঁছে গেছে গোটা দেশে, তাতেই দাম কমছে। মজুতদাররা পেঁয়াজ আমদানির আগেই নিজেদের গোডাউন খালি করতে শুরু করেছেন। আর এর সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ।

ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুখবর শুনিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ এবং চিনি আমদানির জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো আমরা নিয়েছি, নীতিগতভাবে ভারত সরকার সে বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।’ তার আশা, খুব শিগগরিই পেঁয়াজের ঝাঁজ কমবে। এর আগে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প, বস্ত্র ও ভোগ্যপণ্য এবং খাদ্য ও গণবিতরণবিষয়ক মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু টেলিফোনে ১ লাখ টন চিনি ও ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ সরবরাহে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান। ভারত নীতিগতভাবে পেঁয়াজের পাশাপাশি চিনি রপ্তানিতেও সম্মত হয়েছে।

অথচ ভারতের বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা এখন তুঙ্গে। সেখানে চাহিদার অনুপাতে ফলন হয়নি। তাই নিজেদের বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে গত বছরের ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। পরে এ নিষেধাজ্ঞা চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশসহ আরও পাঁচটি দেশে সীমিত আকারে পেঁয়াজ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। দিল্লিতে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রকের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে লেখা হয়েছে, রমজান মাসকে মাথায় রেখে, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে দ্রুত পেঁয়াজ রপ্তানি করা হবে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের খাতিরে বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, মরিশাস, ভুটান, বাহরাইন ও নেপালে তারা পণ্যটি রপ্তানি করবে। বাকি দেশগুলোর জন্য নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে।

বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্থিতিশীল। ভারত রপ্তানি বন্ধ করলেই বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসটির দাম। গোটা দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। তবে গত অর্থবছরে ৩৪ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ আমাদের দেশেই উৎপাদন হয়। তবে মাঠ পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যন্ত যেতে এক-চতুর্থাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়, কিংবা শুকিয়ে কমে যায়। ফলে ভোক্তারা তাদের চাহিদামতো দেশীয় পেঁয়াজ পান না। এ ছাড়া পেঁয়াজ সংরক্ষণেরও বাংলাদেশে সমস্যা রয়েছে। ফসল ওঠার সময় বাজারে চাহিদা কমে গেলেও অন্য সময় মারাত্মক চাহিদা বাড়ে দেশীয় পেঁয়াজের। গত বছরের মার্চে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তবে এপ্রিলের মাঝামাঝি নিত্যপণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করে।

জুনের শুরুতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয় ১০০ টাকা। তখনই সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়। তারপর বাংলাদেশ আমদানি করে ৭ লাখ ৫ হাজার ৪৩৭ টন পেঁয়াজ। তবে গত বছর ৮ ডিসেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করার আগে পর্যন্ত মোট ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ২৯১ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছিল কৃষি দপ্তর। কিন্তু আমদানি করা হয় অনেক কম পেঁয়াজ। বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনামাফিক কাজ করে চলেছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চলছে পেঁয়াজ চাষ। পেঁয়াজ চাষে সাফল্য এলেও চাহিদা রয়েই গেছে। তাই ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা বাংলাদেশের জন্য জরুরি।

এদিকে, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবর জানাজানি হতেই বাংলাদেশের বাজারে হঠাৎ পণ্যটির সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। দেশি পেঁয়াজেরও দাম কমছে। দেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে অন্তত ১০ টাকা। ঢাকা শহরে পাইকারিতে ১০০ ও খুচরায় ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ৯০ ও ১০০ টাকায় মিলেছে। আমদানি শুরু হলে দাম আরও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরেই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। সম্পূর্ণ দেশি পেঁয়াজ দিয়েই বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। সামনেই রমজান মাস। প্রতি বছরই গোটা দেশে এ সময় পেঁয়াজের বাড়তি চাহিদা থাকে। তাই ভারত থেকে পণ্যটি আমদানির জন্য আগে থেকেই অনুমতিপত্র (আইপি) নিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এলসি খোলা থেকে শুরু করে পেঁয়াজ আমদানির জন্য আমদানিকারকরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।

ভারত গত বছর ৮ ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ বাড়াতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল সাধারণ মানুষের কপালে। রমজান মাস ও ঈদের আগে সুখবর নিয়ে এসেছে বাংলাদেশে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে সম্মতির বার্তা। কূটনৈতিক মহলের খবর, ভারত বাংলাদেশকে শুধু পেঁয়াজই রপ্তানি করছে না, পেঁয়াজের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আরও উন্নত করারও বার্তা দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুদেশের সম্পর্ককে উন্নীত করেছেন আত্মীয়তার গভীর বন্ধনে। পেঁয়াজ বা চিনি আমদানি-রপ্তানি তারই সূচক মাত্র। এর মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধুত্বের শিকড় এখন অনেক গভীরে, সেটা আবারও ফুটে উঠল।


আরো সংবাদ পড়ুন...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর