নরসিংদীর রায়পুরায় সাবিকুন্নাহার (২২) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার ডেলিভারির সময় ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে ডাক্তারের বিরুদ্ধে। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটেছে।
গত মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১টার দিকে অন্তঃসত্ত্বা সাবিকুন্নাহারের গর্ভকালীন ব্যাথা উঠলে পরিবারের লোকজন তাকে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর অন্তঃসত্ত্বা সাবিকুন্নাহার ও বাচ্চা সুস্থ আছে বলেও জানান। এসময় আমরা রোগীকে সিজার ডেলিভারির করানোর কথা বললে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নরমাল ডেলিভারিতে বাচ্চা প্রসব হবে বলে জানান। পরবর্তীতে সকালে পুনরায় গর্ভকালীন ব্যাথা তীব্র হলে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। পরে কিছুক্ষন পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স ডেলিভারির পর মৃত বাচ্চা আমাদের পরিবারের লোকের হাতে দিয়ে জানান সাবিকুন্নাহার মৃত বাচ্চার জন্ম দিয়েছেন।
এছাড়া ডেলিভারির পর রোগীকে ট্রলি ব্যতিত হাঁটিয়ে বেডের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তার নিচ দিয়ে অনবরত রক্ত বেয়ে পরতে দেখে আমরা ট্রলির ব্যাপারে কথা বলি। তখন তারা বলেন নরমাল ডেলিভারিতে ট্রলি ব্যবহার করা হয় না। পরে আমাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এক পর্যায়ে আমি হাসপাতালে ট্রলিতে কিছু আঘাত করলে সেখানকার কর্মরত একজন আমাকে তালাবদ্ধ করে রেখে দেয়। পরে আমর স্বজনরা আমাকে ছারিয়ে নেয়। শুধু তাই নয় ওটিতে থাকা অবস্থায় আমার বোনকে এক নার্স থাপ্পরও মারে। আমরা বিষয়টা জানতে পেরে জিজ্ঞেসা করলে তারা আমাদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করে।
রোগী সাবিকুন্নাহার বলেন, রাতে ভর্তি করানোর পর আমাকে ব্যাথা বাড়ানোর জন্য একটা ইনজেকশন পুশ করা হয়। পরবর্তীতে বলা হয় ভোরে তারা আমাকে স্যালাইন লাগাবে। ভোরে আমার স্যালাইন লাগানোর জন্য ডাকলে তারা আমার মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। সকালে যখন ব্যাথা বাড়ার পর আমাকে ওটিতে নেওয়া তখন একজন আমার পেটের দিকে জোরে জোরে চাপ দিতে থাকে তখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্থা হয়। এক পর্যায়ে আমি তার হাতটা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সেখানে থাকা একজন আমাকে থাপ্পর মারে। পরে আরেকজন বার বারই আমাকে জিজ্ঞেসা করতেছিলো বাচ্চা নড়াচড়া করার কোন ফিল আমি পাচ্ছি কি না, তখন আমি তাদের বাচ্চা নড়াচড়া করে বলে জানাই। পরে আমাকে থাপ্পর মারা মহিলা যখন আমাকে আবার পেটে জোরে চাপ প্রয়োগ করে তারপর আমাকে জিজ্ঞেসা করা হয় এখন বাচ্চা নড়ে কি না। তখন আমি বলি এখনতো তেমন কিছু বুঝতেছি না। তবে একটু আগেও নড়তেছিলো। তখন ওটিতে থাকা আরেকজন তাকে চাপ দিতে মানা করে তারপরও তিনি পেটে চাপ প্রয়োগ করে এবং অকথ্য ভাষায় কথা বলতে থাকে। পেটে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের কারণের আমার বাচ্চাটা মারা গেছে।
সাবিকুন্নাহারের এর ভাই মিজান জানান, প্রায় দেড় বছর আগে রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর এলাকার আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার মেয়ে সাবিকুন্নাহারের সাথে একই উপজেলার তুলাতুলি পশ্চিমপাড়া এলাকার রহমত উল্লাহ-এর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত ডা. জেসমিন বলেন, বাচ্চার মায়ের কিন্তু নরমাল ডেলিভারিতে কোন সমস্যা ছিলো না। স্বাভাবিক নিয়মেই বাচ্চা হয়েছে। বাচ্চা হওয়ার পর কাঁদে নাই এবং কোন শ্বাসপ্রশ্বাসও নেয় নি তাই বাচ্চাকে মৃত ঘোষনা করা হয়েছে। ওটিতে রোগীকে থাপ্পর মারার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন তাদের বাচ্চা মারা গেছে, এখন তারা কত কথায় বলবে। তবে থাপ্পর মারা বা খারাপ ব্যাবহার এরকম কোন ঘটনা ঘটে নি।
এ ব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য পঃপঃ কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ নূরউদ্দিন জাহাঙ্গীর-এর মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করে নি।