সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ এখন দুবাইয়ের পথে। জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত নাবিকদের বহনকারী জাহাজটি ১৯ থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে দুবাইয়ে পৌঁছবে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সোমবার এ তথ্য জানান।
ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নৌপ্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত করে ২৩ জন নাবিককে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং সেটা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় এ বিষয়ে সজাগ ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, আন্তর্জাতিক নৌ উইংগুলো বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছে।
‘নাবিকদের দ্রুত মুক্ত করে আনার কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।’
ব্যাগে করে মুক্তিপণ দেয়ার ছবি দেখা গেছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কোন সিনেমার ছবি আমি তো জানি না। এমন ছবি তো আমরা অনেক চলচ্চিত্রে দেখি। কোন ছবি কোথায় গিয়ে কীভাবে যুক্ত হয়েছে, কোনটার সঙ্গে কোনটা এডিট হয়েছে আমি জানি না।
‘জানতাম পরিত্যক্ত জিনিস পানিতে ফেলে। এত দামি জিনিস পানিতে ফেলে জানা ছিল না।’
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এরপরের পুরো বিষয়টি জাহাজ ও নাবিকদের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়। নাবিকরা কতদিনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে গেছেন, সেই চুক্তি তারা বহাল রাখবেন, নাকি তারা ফিরে আসবেন- এসব তাদের নিজস্ব বিষয়।
‘তবে মালিক পক্ষ গতকাল (রোববার) খুব ভালো একটি কথা বলেছে। নাবিকরা যদি চান বাংলাদেশে ফিরে আসবেন, তাহলে তাদের বিমানযোগে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে। সেখানে তাদের রিপ্লেস যারা হবেন, সেটা নিয়েও হয়তো তারা কাজ করছে।’
‘সমুদ্রপথ নিরাপদ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রস্তাবনা তৈরির কাজ করছে’
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রপথ নিরাপদ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ একটি প্রস্তাবনা তৈরির কাজ করছে।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নৌসংস্থার (আইএমও) নির্বাচিত ‘সি’ ক্যাটাগরির সদস্য। ১৭৪টি দেশ আইএমও’র সদস্য।
‘বাণিজ্যিক জাহাজগুলো যাতে বিভিন্ন ধরনের সংকটের সময়ে সমুদ্রপথে চলাচল করতে পারে সে লক্ষ্যে একটি প্রস্তাবনা তৈরির কাজ চলছে। শিগগির সেটি আইএমও-তে পাঠানো হবে। কারণ বাণিজ্যিক জাহাজগুলো যদি সংকটের সময়ে চলাচল করতে না পারে তাহলে বিশ্ব বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়, অস্থিরতা বেড়ে যায়।
‘মার্চেন্টশিপগুলো যাতে বিভিন্ন সংকটের সময়ে নিরাপদে চলাচল করতে পারে সে ধরনের প্রস্তাবনা তৈরির জন্য নৌপরিবহন অধিদপ্তর কাজ করছে। এটি একটু সময়সাপেক্ষ বিষয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি- দ্রুত প্রস্তাবনাটি তৈরির।’
‘লঞ্চের রশি ছিঁড়ে নিহত হওয়ার ঘটনায় সার্ভেয়ারদের দুর্বলতা থাকলে তাদেরও বিচার হবে’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঈদের দিন ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় সার্ভেয়ারদের দুর্বলতা থাকলে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে। অভ্যন্তরীণ নৌপথে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে প্রতিটির বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘লঞ্চের ওই ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল তাদের অনেকে পালিয়ে গেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
‘একটি মামলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক লঞ্চ গতি ও শক্তি নিয়ে ঘাটে ভেড়ার চেষ্টা করে। এটা সব লঞ্চ করে ব্যাপারটা তা নয়। বিশেষ বিশেষ কিছু লঞ্চ করে, শক্তিশালী কোনো মালিক থাকলে তারা এটা করে। আমরা সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এই জায়গাটায় আমাদের জিরো টলারেন্স।’