পহেলা বৈশাখা তথা বাংলা নববর্ষ উদযাপনের একটি ঐতিহ্য হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিল্পী ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত এই শোভাযাত্রা পুরো উৎসবকেই বর্ণাঢ্য করে তোলে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০১৬ সালে বাংলাদেশের পয়লা বৈশাখের এই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রা তার আপন উৎসবের আমেজে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যাত্রা শুরুর আগে প্রথমে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়।
আজ রোববার পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ৯টা ১৮ মিনিটে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি চারুকলার সামনে থেকে যাত্রা করে। শোভাযাত্রাটি চারুকলার সামনে থেকে শাহবাগ, ঢাকা ক্লাব ও শিশু পার্কের সামনে থেকে ইউটার্ন নিয়ে টিএসসিতে এসে শেষ হয়।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা থেকে ‘আমরা তো তিমির বিনাশী’।
মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরুতে ছিল র্যাবসহ নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। এরপর ঢাক ঢোল বাজিয়ে যাচ্ছিল শোভাযাত্রাটি। তারপরে উৎসব প্রেমীরা সেই শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। সহযাত্রা অংশ নেওয়ার জন্য হাতি থেকে শুরু করে নানা ধরনের প্রতিকৃতি তৈরি করেছিল বিভিন্ন চিত্রশিল্পীরা। এসবের প্রদর্শনী দেখা গেছে শোভাযাত্রায়।
মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরুর আগে সকাল থেকে শাহবাগ এবং চারুকলা ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করার জন্য বাঙালিয়ানা সাজে হাজারো উৎসব প্রেমী মানুষ শাহবাগ থেকে চারুকলা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করেছেন। এছাড়া দেশের বাইরের কিছু উৎসব প্রেমীরাও অংশগ্রহণ করতে চারুকলায় এসেছেন।
পহেলা বৈশাখ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, তবে নিরাপত্তার কারণে শোভাযাত্রার ভাবগাম্ভীর্য যেন নষ্ট না হয় সেই বিষয়টিও দেখা হবে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ক্যাম্পাস এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে রয়েছে। এছাড়া ইভটিজিং প্রতিরোধ পুলিশ প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল টিম প্রস্তুত আছে।
অন্যদিকে আজ বৈশাখের প্রথম প্রহরে রমনার বটমূলে চলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসব। রাজধানী ঢাকায় আজ সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে রাজপথে। পোশাকে রয়েছে লাল-সাদার প্রাধান্য। নারীরা লাল-সাদা শাড়ি, কাচের চুড়ি, দুল-মালায় বাঙালিয়ানার সাজে সেজেছেন। পুরুষের গায়ে রয়েছে অনুরূপ রং-নকশার পাঞ্জাবি। অনেকের মাথায় শোভা পাচ্ছে লাল-সবুজ জাতীয় পতাকার ছাপ দেওয়া ব্যান্ড।
তাঁরা ছায়ানটের প্রভাতি অনুষ্ঠানের গান শুনে, মঙ্গল শোভাযাত্রায় পায়ে পা মিলিয়ে, উদ্যানে, লেকের পাড়ে, ঘুরে–ফিরে বেড়িয়ে, আড্ডা দিয়ে, বিকেলে শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অনুষ্ঠান উপভোগ করে তবেই ঘরে ফিরবেন। বেড়ানো আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়াতেও আজ সবাই বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা রকমের পদগুলো রান্নায় সচেষ্ট হবেন।