শিক্ষক-সহপাঠীকে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যাজনিত কারণে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও ওই শিক্ষার্থীকে সহায়তাকারী শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনার তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। শুক্রবার রাতে জরুরি বৈঠক শেষে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম জানান, আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার সুইসাইড নোটে দেয়া আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকি আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার ও দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সহায়তাকারী ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত ও প্রক্টরিয়াল বডি থেকে তাৎক্ষনিক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক দ্রুত প্রতিবেদন পেশ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি জানান, তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ ও সঙ্গীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ঝুমুর আহমেদ। এছাড়াও কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার রঞ্জন কুমার দাস।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সর্বশেষ শনিবার সকাল ৯টায় তার সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি নিয়ে অবন্তিকার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার উদ্দ্যেশে রওনা হয়েছে। উপাচার্য ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন দায়িত্ব নেয়ার পর পূ্র্বের ঘটনা নিয়ে নিয়ে অবগত ছিলাম না। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর সে যদি আসত তাহলে আমি ভিসি ম্যামের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিতাম। বিষয়টি নিয়ে আমি অত্যন্ত দুঃখিত।’
এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত ১টায় উপাচার্য ক্যাম্পাসে গেলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আটকে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তখন ড. সাদেকা হালিম শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় ঘোষণা দেন।
এসময় এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত কর্মদিবস সময় নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে ১২ ঘণ্টায় মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থার দাবি জানান। একই সঙ্গে রাতের মধ্যেই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে থাকেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে সেখানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। উপাচার্যের আশ্বাসে রাত ৩টার পর তারা নতুন কর্মসূচি দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ যে শাস্তির বিধান রয়েছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানিসহ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রশাসনের গাফিলতির কারণে অভিযুক্তরা পার পেয়ে গেছেন। তাই এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া সব বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এছাড়াও এ ঘটনায় প্রথমে গঠন করা তদন্ত কমিটির একজনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ থাকায় শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে শনিবার বিকেল ৩টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে ওনার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করিনি। এমনকি ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা কোনো জায়গাতেই কানেকটেড না আমি। আমাকে দোষী প্রমাণের জন্য এভিডেন্স লাগবে। এভিডেন্স ছাড়া এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করে সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ত নেই। মেয়েটার সঙ্গে দেড় বছর আগে আমাদের কথা হয়েছে ছেলেটার বিষয় নিয়ে। আমি চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’