রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম :
আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে: জামায়াত আমির হাসপাতাল ছাড়লেন জামায়াত আমির, আফসোস করে যা বললেন কমলগঞ্জে ৪৫ দিনের নবজাতকের ঘরে গিয়ে জন্ম সনদ ও শুভেচ্ছা বার্তা প্রদান” লন্ডন থেকে সাইবারসিকিউরিটি সহ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছে কমলগঞ্জের সুমাইয়া সিরাজী তুলি কুলাউড়ায় ৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ মৌলভীবাজারে শনিবার ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায় কমলগঞ্জে পানিতে ডুবে শিশুর মৃ*ত্যু কমলগঞ্জে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন; আলামত সহ মূল আসামী গ্রেফতার কমলগঞ্জে গাঁজাসহ এক নারী আটক কমলগঞ্জে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভা

মৌলভীবাজারে পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি সরকারি টেকনিক্যাল কলেজের কাজ!

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৯০ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০২৪

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে নির্মাণ কাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলায় তৈমুছ আলী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবন নির্মাণের কাজ ঝুলে আছে পাঁচ বছর ধরে। কাজ শুরুর পর থেকে ইতিমধ্যে কচ্ছপের গতিকেও হার মানিয়েছে এই কলেজের নির্মাণ কাজ।

২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও মেয়াদ শেষ হওয়ার চার বছরেও শেষ হয়নি এ টেকনিক্যাল কলেজ নির্মাণের কাজ। ফলে পিছিয়ে পড়ছে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। জনমনে সৃষ্টি হয়েছে অসন্তোষ আর ক্ষোভ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের অবহেলাকেই দায়ি করছেন স্থানীয়রা।

দীর্ঘ ৫ বছর নির্মাণ কাজ ঝুলে থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার পাওয়া এ প্রকল্পের কাজ মুখ থুবরে পড়েছে। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আর কবে শেষ হবে এ টেকনিক্যাল কলেজের কাজ। দায়িত্ব প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিন দিন নির্মাণ কাজে চরম অবহেলা করে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষার প্রসার ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ১০০টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ তৈরির উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণের কাজ পায় ‘এম এন এন্টারপ্রাইজথ ও ‘ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংথ নামের ঢাকার দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ তৈমুছ আলী এমপি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজথ-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মৌলভীবাজার-১ (জুড়ী-বড়লেখা) আসনের সংসদ সদস্য ও সরকারের সাবেক পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, এমপি। ২০২০ সালের জুন মাসে কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কাজের উদ্বোধনের পর কাজের ধীর গতি, কাজ বন্ধ থাকা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাপাত্তা, বিভিন্ন সময়ে কাজে অনিয়ম, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকের মৃত্যু, একাধিকবার সময় বাড়ানো, এভাবেই কেটে গেছে প্রায় পাঁচটি বছর। তবুও শেষ হয়নি এ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবন নির্মাণের কাজ। সাধারণ মানুষের মনে শুধু এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জুড়ী উপজেলার তৈমুছ আলী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাজ শেষ হবে কবে?

অনুসন্ধানে জানা যায়, কার্যাদেশ পাওয়া এম এন এন্টারপ্রাইজথ ও ‘ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংথ নামের ঢাকার দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল ২০২০ সালের জুনের মধ্যে। এর মধ্যে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫২%। সম্পূর্ণ কাজ বুঝিয়ে দেওয়াতো দূরের কথা বিভিন্ন সময়ে কাজ বন্ধ থাকলেও ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৬ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকার বিল তুলে নিয়েছেন। মন্ত্রনালয় ২০২৩ এর জানুয়ারি তে ক্লাস করার জন্য সময় বেধে দিলেও কাজ শেষ না হওয়ায় এ শিক্ষা বর্ষে কলেজের কার্যক্রম শুরু করা যায় নি। তবে ২০২৪ ইং শিক্ষাবর্ষে মাত্র ২/৩ টি কক্ষ প্রস্তুত করে কোন মতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এতে করে সরকারের কারিগরি শিক্ষার প্রসারের যে উদ্যোগ তা মুখ থুবরে পরেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ঠিকমতো তদারকি না করার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজে গাফিলতি সহ নানা টালবাহানা করছে।

মঙ্গলবার স্থনীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাঁচ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত চতুর্থ তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। পঞ্চম তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। আরেকটি চার তলা প্রশাসনিক ভবনের ছাদ সম্পন্ন হলেও ভবনটিতে এখনো ইটের কাজ চলছে। অর্ধেকের বেশি কাজ বাকি থাকলেও নির্মাণ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গতি যেন কিছুতেই বাড়ছে না।

এখনো যে পরিমাণ কাজ রয়েছে এ বছরে তো নয়ই, বরং ২০২৫ সালে কাজ শেষ করতে হলে দৈনিক ২০/২৫ জনের আরো অধিক পরিমাণে শ্রমিক প্রয়োজন বলে জানান স্থানীয়রা। অবশ্য ২০২৪/২০২৫ ইং সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা যে নেই তা বেরিয়ে এসেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের গাফলাতির মাধ্যমে।কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে জানা যায়, গত ২০২৩ ইং শিক্ষাবর্ষে এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর কথা থাকলেও কোন কক্ষ প্রস্তুত না থাকায় শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।

পরে ২০২৪ ইং শিক্ষাবর্ষে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোনমতে তিনটি কক্ষ ও শিক্ষকদের বসার জন্য একটি কক্ষ প্রস্তুত করে দিলে এ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬৫ জন, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে ৪০ জন করে মোট ১৪৫ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। অর্ধেকের বেশি কাজ এখনো সম্পন্ন না হওয়ায় এখানে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছেন বলে জানা যায়। ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিবাবক শরীফ উদ্দিন বলেন, অনেক আশা ভরসা নিয়ে ছেলেকে তৈমুছ আলী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি করেছি। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের কাজ এখনো সম্পন্ন না হওয়ায় লেখাপড়ার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। অবিলম্বে সরকারের কাছে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জোর দাবি জানাই।

উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখরুল ইসলাম ও মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি রতীশ চন্দ্র দাশ বলেন, পাঁচ বছর আগে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে আছে।

পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের হাসান জেবলু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারিগরি শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে সারাদেশের মত জুড়ী উপজেলায়ও আমার বাবার নামে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে এখনও নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় আমরা চরম হতাশায় আছি। অতি দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি করছি।

আলাপকালে উপজেলার একাধিক সিনিয়র সাংবাদিক জানান, এ কাজে প্রশাসনিক তদারিকর অনেক ঘাটতি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রয়োজনীয় তদারকি থাকলে ঠিকাদার এত ধীরগতিতে কাজ চালাতে পারতেন না। ঠিকমতো কাজ পরিদর্শনেও আসেন না সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এসব ঠিকাদারকে কালো তালিকাভূক্ত করা উচিত মন্তব্য করে তাঁরা দ্রুত ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি জানান।

এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ধীরগতির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি ঠিকাদারের মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিকে দুষলেন। ঠিকাদারের মৃত্যুর পর আর্থিক সংকট এবং বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় কাজ টানা যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৫২% কাজ হয়েছে। এ সময় তিনি ক্লাস করার জন্য দ্বিতীয় তলায় কয়েকটি কক্ষ প্রস্তুত করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান। তবে পুরোপুরি কাজ ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ করতে পারবেন কিনা এ প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এরিয়ে যান।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এমএ মোঈদ ফারুক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস বলেন, এ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের কাজ শেষ না হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অতি দ্রুত কাজ টি শেষ করার দাবি করছি।
তৈমুছ আলী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মুহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ ইং শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির মোট ১৪৫ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে পড়াশোনা করছে। এ প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সকল উন্নয়ন সম্পন্ন করা হলে আগামীতে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যাবে।

কাজের অগ্রগতি ও ধীরগতির নিয়ে আলাপকালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) আফজাল হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে এ কলেজের কাজ শেষ হয়েছে ৫২ শতাংশ। ২০২০/২১ সালে করোনাভাইরাসের কারণে এবং ঠিকাদার মারা যাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সমস্যার কারণে কাজ বিলম্ব হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নতুন করে আবারো সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে। নিয়মিত পরিদর্শন করে কাজ দ্রুত শেষ করতে তাগিদ দিচ্ছি।


আরো সংবাদ পড়ুন...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর