অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের সময় পাখির মতো মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে যারা বেঁচে ছিলেন তাদের অনেকেই পঙ্গু হাসপাতলে ভর্তি হয়েছিলেন। সেই পঙ্গু হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান। ভেতরে ঢোকার সময় সেখানে সমস্ত মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ভেতরে ঢুকে আর্তনাদ, অসুস্থ, পঙ্গু, গুলিবিদ্ধ মানুষের ওপর থুতু ছিটানো হয়েছে। ডাক্তার ও নার্সদের বলা হয়েছে কেউ যাতে চিকিৎসা না পায়। সোমবার (৩০ জুন) বিকেলে মৌলভীবাজার শিল্পকলা একাডেমী অডিটরিয়ামে জেলা আইনীজীবী সমিতির ২নং বার ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা এমন একটি কালো অধ্যায় পেরিয়ে এসেছি।
হাসপাতালে যাদের সাথে এরকম আচরণ করেছে তারাসহ কর্তব্যররত ডাক্তার ও নার্সরা সাক্ষী দিতে যায়নি। টেলিফোনে যখন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে মানুষ হত্যা কর। সে রেকর্ড এখন আমাদের হাতে আছে। ফরেনসিক রিপোর্ট এসেছে এটি তার কণ্ঠ।
আমরা সেই বিচার করতে গিয়ে কলঙ্কের দায়ভার নেব না। নেব না বলেই আমরা বিচার উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ প্রকিয়ায় করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। সে বিচার প্রক্রিয়ায় যদি কেউ বাঁধা হয়ে দাড়ায় সেই বিচারিক প্রক্রিয়ায় যদি কেউ গোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে। আমরা তাদেকও আইনের আওতায় এনে জনসম্মুখে ন্যায় বিচারের চেষ্টা করবো। এটা আমাদের প্রত্যয় ও অঙ্গীকার।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে পুলিশ বাদী হয়ে ৬০ লাখ ভুয়া ও মিথ্যা মামলা করেছে। সাড়ে ৪ হাজার মানুষকে ক্রসফায়ার করেছে। ৭০০ মানুষকে গুম করেছে। আইনের শাসনকে নৎসাত করেছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে স্থায়ী রূপ দেওয়ার স্বপ্ন বুনে তা বাস্তবায়নের প্রচেষ্ঠা চালান হয়েছিল। গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে একটি স্বচ্ছ কাঠামোর রূপ দেওয়া হয়েছিল। সে স্বপ্নকে বাংলাদেশের জুডিশিয়ারিতে ইন্টেলেকচুয়াল করাপশনের মাধ্যমে তা হত্যা করা হয়েছে। সে হত্যাকাণ্ডের মহা ভিলেন ছিলেন বাংলাদেশের জুডিশেয়ারির কুলাঙ্গার প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের দিনের ভোট রাতে করা হয়েছে। মানুষের ভোধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষের প্রতি অবিচারের বীজ বপণ করা হয়েছে। খুনের রাজনীতি চালু হয়েছে। এই ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের বিপক্ষে জনতা তার রায় প্রদান মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ কখনো মানুষের হ্রদয়ের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয় না। ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের জন্য ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাতের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই রায়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হরণের কারণে মানুষকে রাজ পথে নামতে হয়েছে।
আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজারের জেলা ও দায়েরা জজ মো. খাদেম উল কায়েস, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, মৌলভীবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জজ এনায়েত কবির সরকার, জেলা পুলিশ সুপার এম,কে,এইচ, জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এ টি এম ফয়েজ উদ্দিন, পিপি অ্যাডভোকেট ড. আব্দুল মতিন চৌধুরী, জিপি অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ।
মৌলভীবাজার স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট বকশী জুবায়ের আহমদের সঞ্চলানায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রবীণ আইনজীবী শান্তি পদ ঘোষ, অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার দাস, অ্যাডভোকেট নিয়ামুল হক, অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াহিদ প্রমুখ। এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল জেলা আইনীজীবী সমিতির ২নং বার ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ফলক উম্মোচন করেন।