ভয়ংকর রূপ নেয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্র সন্ধ্যা ৬টার পর পরবর্তী ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ রোববার বিকেলে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গতি বাড়িয়েছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এটি এখন ১৩ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসছে।
তিনি বলেন, ‘উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে বৃষ্টিসহ দমকা বা ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে মোংলার কাছ দিয়ে সাগর আইল্যান্ড (পশ্চিমবঙ্গ) খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে।’
‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র অতিক্রমের পর এর নিম্নভাগ অতিক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে’- বললেন আজিজুর রহমান।
এদিকে রেমালের প্রভাবে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
এদিকে রেমালের প্রভাবে কক্সবাজার ও কোলকাতার সকল ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে উপকূলের লঞ্চ চলাচল। দৌলতিয়া-পাটুরিয়ায়ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে দুর্যোগ মোকাবিলা এবং দুর্গত মানুষের পাশে থাকার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।
আজ রোববার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার পর প্রতিমন্ত্রী ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘৮ লাখের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন। বাকিদের আসার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে আপাতত স্কুল খোলা থাকবে, তবে ক্লাস বন্ধ থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল আমরা বলেছিলাম আজকে ভোর থেকে এটা শুরু হতে পারে। ঝড়ের গতি কম ছিল বলে আজ ভোরে আসেনি। গতকাল গতিবেগ ছিল ১৬ থেকে ১৭ কিলোমিটার। ভোরে গতি কমে দশের নিচে চলে আসে, পরবর্তীতে ৬ কিলোমিটারে নেমে আসে। যার জন্য এটা সময়মতো এখনো পৌঁছেনি। তবে আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এটা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে এবং আজ সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের প্রথম ভাগ অতিক্রম শুরু হবে। মধ্যরাতে মূল অংশ বাংলাদেশ অতিক্রম করবে।’
ঝড়ের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত প্লাবিত হতে পারে। যদি জোয়ার থাকে এটা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রেমালের প্রভাবে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকাটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য আমরা সবাইকে নিয়ে আজ সভা করেছি। সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি’- বললেন প্রতিমন্ত্রী।