একেকটি ঘূর্ণিঝড়ের একেক রকম নাম হয়ে থাকে। সিডোর,আইলা, মোখা, আম্পান, নারগিসসহ এরকম কতো নামের ঘূর্ণিঝড় অতীতে আঘাত হেনেছিল। কথা হচ্ছে- ঘূর্ণিঝড়ের এই ধরনের নাম কিভাবে এবং কেনো করা হয়- এটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে নানান প্রশ্ন থাকে। এখন যেমন দেশজুড়ে ‘রেমাল’- এর নাম সকলের মুখে মুখে।
জানা গেছে, ঘুর্ণিঝড়ের এরকম নামকরণের পেছনে থাকে বিভিন্ন সতর্কীকরণ কেন্দ্র দ্বারা পূর্বাভাস, ঘড়ি এবং সতর্কতা সম্পর্কিত পূর্বাভাসক এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করার জন্যই হয়ে থাকে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, একটা সময় ঘূর্ণিঝড়ের কোনো নাম থাকত না। আমাদের দেশে ১৯৭০ সালে কিংবা ১৯৯১ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেছে। কিন্তু সেগুলোর কোনো নাম নেই। শুধু আমাদের দেশের নয়, অন্যান্য দেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়েরও কোনো নাম থাকত না। একসময় এসব ঝড়ের নাম রাখার একটি চল শুরু হয় একপর্যায়ে। কারণ, নামবিহীন থাকলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি, ধরন সম্পর্কে তথ্য দ্রুত জানা যায় না। এর আঘাত হানার সময় বা তারিখ বের করে পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করতে হয় আবহাওয়াবিদদের। তাছাড়া ভবিষ্যতের তথ্য উপাত্তের জন্য এবং ডাটা সংরক্ষণের জন্যও ঘূর্ণিঝড়ের নাম প্রয়োজন হয়ে থাকে। নাম থাকলে সেগুলো ধরে পরবর্তীতে কাজ করতে সুবিধা হয়।
এই কাজটি করে থাকে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও )। ডব্লিউএমও সে জন্য পাঁচটি বিশেষ আঞ্চলিক আবহাওয়া সংস্থার (আরএসএমসি) সঙ্গে সমন্বয় করে ২০০৪ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করেছে। আরএসএমসি তার সদস্যদেশগুলোর কাছ থেকে নামের তালিকা চেয়ে থাকে। তালিকা পেলে দীর্ঘ সময় যাচাই-বাছাই করে সংক্ষিপ্ত তালিকা করে ডব্লিউএমওর কাছে পাঠায়।
এরপর বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা অনুমোদন করে আঞ্চলিক কমিটির একটি প্যানেল। তার নাম ডব্লিউএমও/এসকাপ প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস। এর মধ্যে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১৮ সালের আরএমএসসি নতুন করে ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা করে। এ সময় ১৩টি দেশ ১৩টি করে নাম দেয়। নামকরণের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মেনে চলা হয়। যেমন রাজনীতি বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি বা লিঙ্গনিরপেক্ষ হতে হবে নামগুলোকে। বিশ্বের কোনো অঞ্চলের কোনো মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করে, এমন নাম দেওয়া যাবে না। নাম রূঢ় হতে পারবে না। এটি সংক্ষিপ্ত ও সহজে উচ্চারণ করা যায়, এমন হতে হবে। সর্বোচ্চ আটটি বর্ণ থাকতে হবে ওই নামে। নাম দেওয়ার পাশাপাশি এখানে উচ্চারণও দিয়ে দিতে হবে। এরকম নানা বিষয় ঠিকঠাক করে একেকটি ঘূর্ণিঝড়ের একেক নাম হয়ে থাকে।
রেমাল-এর নাম যেভাবে এলো
ঝড়ের নাম ঠিক করার জন্যে প্রত্যেক দেশ কিছু নাম প্রস্তাব করে। প্যানেল অন ট্রপিকল সাইক্লোন-এর কাছে সেই নামগুলো পেশ করা হয় ও একটি তালিকা তৈরি হয়। উল্লেখিত ১৩ দেশের সংস্থা এস্কেপ ২০২০ সালেই ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে একটি তালিকা তৈরি করে রেখেছে। সেই তালিকা থেকে এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয় ‘রেমাল’। ইংরেজি নামের আদ্যক্ষর অনুযায়ী নামের তালিকা হয়। যেমন ইংরেজি বর্ণমালা অনুযায়ী এই ১৩ দেশের মধ্যে সবচেয়ে আগে থাকে বাংলাদেশের নাম। আর শেষে থাকে ইয়েমেনের নাম। ঘূর্ণিঝড়ের নামের ওই তালিকা থেকেই এর আগের ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ইয়েমেনের দেওয়া ‘মোখা’। আর এবার ওমানের দেওয়া নাম ‘রেমাল’। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, রেমাল একটি আরবি শব্দ। এই নামের অর্থ ‘বালু’। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রেমাল’ নামটি ওমানের দেওয়া। এবারের ঘূর্ণিঝড়ের আনুষ্ঠানিক নামকরণের দায়িত্ব ছিল ওমানের।