মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শনিবার (১৬ মার্চ) সকাল ১০ ঘটিকায় হোটেল শ্রীমঙ্গল ইন এর সম্মেলন কক্ষে জাবারাং কল্যাণ সমিতির আয়োজনে জেলায় বসবাসরত খাসি, মনিপুরী (মৈতৈ) ও মনিপুরী (বিষ্ণুপ্রিয়া) তিন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে করণীয় শীর্ষক দুই দিনব্যাপি পরামর্শ সভা ও লেখক কর্মশালা শুরু হয়েছে।
পাওয়ানকা ফান্ড অব RSF সোস্যাল ফাইন্যান্স- এর অর্থায়নে পরিচালিত সঞ্জীবন প্রকল্পের উদ্যোগে এই পরামর্শ সভা ও লেখক কর্মশালা আয়োজিত হচ্ছে।
জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক ২০২১ বিজয়ী লেখক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা’র সভাপতিত্বে ও সঞ্জীবন প্রকল্পের সমন্বয়কারী জয় প্রকাশ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু তালেব।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিকুল চক্রবর্তী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক ২০২৩ প্রাপ্ত মনিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া লেখক-গবেষক ড. রঞ্জিত সিংহ, মনিপুরী মৈতৈ লেখক আয়েকপম অঞ্জু দেবী, খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল সভাপতি ও খাসি মান্রী জিডিশন প্রধান সুছিয়াং, আদিবাসী নারী নেত্রী ফ্লোরা বাবলি তালাং, শ্রীমঙ্গল উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার কর, বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি জনক দেববর্মা প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু তালেব বলেন, ‘নিজ নিজ মাতৃভাষা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট ভাষার জাতি গোষ্ঠীকে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিনিয়ত চর্চা করতে হবে, নিজের মাতৃভাষাকে ভালবাসতে হবে। সরকার এবং উপজেলা প্রশাসন সবসময় তাদের পাশে থাকবে।’ তিনি তার বক্তব্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক অত্র এলাকার আদিবাসী ভাষাসমূহ রক্ষায় গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উপস্থাপন করেন এবং ঈদ পরবর্তী আদিবাসী লেখক ও ভাষা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের ঘোষনা দেন। তিনি বাংলাদেশের বিপন্নপ্রায় ভাষা রক্ষায় জাবারাং কল্যাণ সমিতি কর্তৃক গৃহীত সঞ্জীবন প্রকল্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রমে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সকল ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
পরামর্শ সভায় উপস্থিত অতিথিরা বলেন ২০১৭ সাল থেকে ৫ টি নৃগোষ্ঠীর ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করায় সরকারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং মাতৃভাষায় বই রচনার ক্ষেত্রে হরফ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট ভাষা গোষ্ঠীর পূর্ণ স্বাধীনতা থাকাকে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। বক্তাগন দ্বিতীয় ধাপের জন্য নির্ধারিত ৬টি ভাষা মৈতৈ মণিপুরি, বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি, খাসি, তঞ্চঙ্গ্যা, বম ও ম্রো ভাষায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান। দুইদিনব্যাপী এ পরামর্শ কর্মশালা আগামীকাল রবিবার বিকালে সমাপ্তি হবে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সঞ্জীবন প্রকল্পের আওতায় জাবারাং কর্তৃক বাংলাদেশের অন্যতম বিপন্নপ্রায় ভাষা রেংমিটচ্যা, বানাই ও লহড়া ভাষায় ওয়ার্ডবুক প্রকাশ, মৈতৈ মণিপুরি, বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি, খাসি, তঞ্চঙ্গ্যা, বম ও ম্রো ভাষাকে পরবর্তী সরকারি উদ্যোগের জন্য প্রস্তুতকরণ, শিশু বান্ধব ছড়া ও গল্পের বই প্রকাশ, ডিকশনারি প্রকাশ ও ঝুঁকিতে থাকা ভাষার বিপন্নতা বিষয়ক ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরির উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।