প্রতিদিনের মৌলভীবাজার ডেস্ক::
বিদ্যুৎ উন্নয়ন পোর্ড-পিডিবির বিতরণ অঞ্চল সিলেটের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিতরণ অঞ্চল সিলেটের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের কর্মচারী ছিলেন বিল্লাল হোসেন। চাকরিকালীন থাকতেন সিলেট নগরীর বাগবাড়ির পিডিবির স্টাফ কোয়ার্টারে। তিনি এখন অবসরে আছেন। অবসরে গেলেও স্টাফ কোয়ার্টারে এখনো তার আবাসন সুবিধা ভোগ চলছে। তার দুই ছেলে পিডিবির বাগবাড়ির কলোনির ‘এফ’ বিল্ডিংয়ের নিচতলায় দুটি বাসা ব্যবহার করছেন। তাদের বাসা নম্বর ১/১ ও ১/৫। একই বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলার ‘এফ’ ৩/৩ বাসা ব্যবহার করছেন প্রধান প্রকৌশলীর অফিস সহকারী নজরুল ইসলামের শ্যালক। পিডিবির আবাসন সুবিধা অবৈধভাবে ভোগের চিত্র কেবল এ দুটি নয়, অবসরে যাওয়া আরও অনেক কর্মচারীর পরিবার ব্যবহার করে যাচ্ছে বাসাগুলো।
বাসা বরাদ্দ নীতিমালা থেকে জানা যায়, বরাদ্দ প্রাপক কর্মচারী চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপসারণ, চুক্তিভিত্তিক চাকরির সমাপ্তি, পদত্যাগ, বদলি, বিদেশে প্রেষণে নিয়োগ অথবা অবসর গ্রহণের ২ (দুই) মাসের মধ্যে দখল ত্যাগ করতে হবে। আবাসনের বরাদ্দ হস্তান্তরযোগ্য নয়। সরকারি কর্মচারী বা তার পরিবার সাধারণভাবে বরাদ্দকৃত বাসায় বসবাস না করলে বরাদ্দ বাতিলযোগ্য হবে। এ ক্ষেত্রে পিডিবির আবাসন সুবিধা ভোগের নীতিমালা লঙ্ঘিত হলেও দেখার কেউ নেই।
সরেজমিনে জানা যায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিতরণ অঞ্চল সিলেট প্রধান প্রকৌশলী দপ্তর এরিয়ার ভেতর রয়েছে বিভিন্ন নামের অনেকগুলো ভবন। এসব ভবনের বাসাগুলো বরাদ্দ হয় পিডিবিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে। তবে সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া অন্য কারও নামে বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ না থাকলেও অনেকে অবৈধভাবে অনেক বাসা ব্যবহার করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী জুজু মিয়ার দুই ছেলে ‘এফ-টাইপ’ ও ‘রূপসা’ নামের দুটি বিল্ডিংয়ে দুটি বাসা ব্যবহার করছেন। জুজু মিয়ার ছেলে নুরুল ইসলাম এফ-টাইপ ৩/৫ এবং রুমন আহমেদ রূপসা ভবনের তৃতীয় তলায় ৩/১ বাসাটি ব্যবহার করছেন। সাবেক কর্মচারী মৃত শামসু মিয়ার ছেলে রশিদ মিয়া রূপসা ভবনের চারতলায় ৪/১ বাসাটি অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন। তিতাস ভবনের নিচতলায় দুটি বাসা এফ-টাইপ ১/৭ ও ১/৮ পিডিবি অনুমোদিত ৫ শতাংশ হারে বরাদ্দ নিয়ে পূর্ণ হারের ব্যবহার করছেন পিডিবির কর্মচারী কামাল মিয়া। প্রধান প্রকৌশলীর গাড়ির চালক পিডিবির নিয়োগপ্রাপ্ত নন। তিনি অস্থায়ীভাবে গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত হলেও স্টাফ কোয়ার্টারে অবৈধভাবে তাকে একটি বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার বাসা নম্বর এফ টাইপ ২/৮।
পিডিবিতে কর্মরত কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পিডিবিতে কর্মরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিজস্ব বাসা আছে। তারা তাদের নামে বরাদ্দ বাসা অবসরপ্রাপ্ত স্টাফদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। তবে বেশ কয়েকজন কোনো ধরনের ভাড়া না দিয়েই জোরপূর্বক বাসা ব্যবহার করছেন। এ কাজে সহযোগিতা করছেন পিডিবির প্রধান প্রকৌশলীর অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম। মূলত প্রধান প্রকৌশলীর প্রশ্রয়ে নজরুল ইসলাম এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
এদিকে প্রধান প্রকৌশলীর অফিসে একাধিকবার গিয়েও তার অফিস সহকারী নজরুল ইসলামের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। পরে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
তবে পিডিবি সিলেট বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির আবসান সুবিধা ভোগ-বাণিজ্য বিষয়টি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে বরাদ্দ ছাড়া কেউ বাসা ব্যবহার করছেন না। সবাই বৈধভাবে বাসা ব্যবহার করছেন। এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ অন্য নামে বাসা ব্যবহার করতে পারেন।’
অন্য নামে বাসা ব্যবহারের সুযোগ আছে কি না- এই প্রশ্নের উত্তরে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘এমন অনেক আছেন যার বাবা চাকরি শেষ হওয়ার পর ছেলে চাকরি করছে। তাই এখন ছেলের পরিবার থাকছে।’