সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম :
সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জে পল্লী চিকিৎসকদের জমজমাট ব্যবসা শ্রীমঙ্গলে শিশুদের শেখার সুযোগ ও নারীদের জীবিকা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনা সভা কর্মধা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হেলাল আহমদ শ্রীমঙ্গলে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দুই জন আটক কমলগঞ্জে শাহজালাল মর্ণিং সান স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও পুরস্কার বিতরণ আগুনে পুড়ে সাংবাদিক কন্যার মৃত্যু আগামির বাংলাদেশ আমরা তরুণদের হাতে তুলে দেবো: আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান লাউয়াছড়া থেকে একরাতে ৩টি মূল্যবান সেগুন গাছ চুরি, চুরি হওয়া গাছের ১৬ টি খন্ডাংশ উদ্ধার উৎসবমুখর পরিবেশে চাম্পারায় শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাক বড়দিনের আয়োজন

নিহত ওয়াসিমের মায়ের কান্না থামছে না

অনলাইন ডেস্ক / ৪০ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গ্রামের বাড়িতে অঝোরে কাঁদছেন ওয়াসিমের মা ও অন্য স্বজনরা।

লেখাপড়ার পর্ব প্রায় শেষ। এক বছর পরে চাকরি করে পরিবারের হাল ধরার আশ্বাস দিয়েছিলেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় চিরতরে হারিয়ে গেছেন এই টগবগে তরুণ।

নিহত ওয়াসিমের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাঘগুজারা বাজারপাড়া এলাকায়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সন্তানকে নিরাপদ স্থানে গিয়ে সাবধানতা অবলম্বনের জন্য বলেছিলেন মা জোসনা। দীর্ঘক্ষণ কথোপকথনে ওয়াসিম তার মাকে আশ্বস্ত করেন- একবছর পরই পড়াশোনার পাট চুকিয়ে চাকরি করবেন। তখন তাকে ঘিরে পরিবারের সব দুশ্চিন্তার অবসান ঘটবে। আর পরদিনই পেলেন সন্তানের মৃত্যুর খবর।

ওয়াসিমের এমন নির্মম মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

নিহত ওয়াসিমের মায়ের কান্না থামছে না
কোটা সংস্কার দাবিতে চট্টগ্রামে চলমান আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন ওয়াসিম।

মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে চট্টগ্রাম শহরের ষোলশহর এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত হন ওয়াসিম। তার মরদেহ বুধবার নিজ গ্রামে আনা হয়। পেকুয়া মেহেরনামা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শোকাহত হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

নিহত মোহাম্মদ ওয়াসিমের বাবা শফিউল আলম সৌদি আরব প্রবাসী। মা জোসনা বেগম গৃহিণী। ওয়াসিম পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। বড় ভাই আরশেদ আলী সৌদি আরব প্রবাসী। বড় বোন মর্জিনা আকতারের বিয়ে হয়েছে। এক ছোট বোন রুশনি আকতারেরও বিয়ে হয়েছে। সবার ছোট সাবরিনা ইয়াসমিন পড়ছে দশম শ্রেণিতে।

স্বজনরা জানান, মোহাম্মদ ওয়াসিম মেহেরনামা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি, ২০১৯ সালে বাকলিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০১৯-২০ সেশনে চট্টগ্রাম কলেজে থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হয়ে চতুর্থ বর্ষে পড়ছিলেন।

স্থানীয় লোকজন ও সহপাঠিরা জানিয়েছেন, মোহাম্মদ ওয়াসিম ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তার ফেসবুক ঘেঁটেও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়াসিমের বাড়ির উঠানে শোকার্ত মানুষের ভিড়। ওয়াসিমের চাচা রিদুয়ানুল হক আহাজারি করে মাঠিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। তাকে কয়েকজন সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। পাকা বাড়িটির ভেতরে ওয়াসিমের মা-বোন ও স্বজনদের আহাজারি চলছে।

ওয়াসিমের মা জোসনা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত রাতিয়া আর পোয়া হইয়েদে; অমা চিন্তা নগরিওন,এক বছর পর চরি গরিলে বেজ্ঞিন ঠিক অইযাইবই। আজিয়া আঁর পোয়ারে মারি ফেলাইয়ে। আঁর পোয়ারে যাঁরা মাইজ্জে ইতারার ফাঁসি চাই।’

ওয়াসিমের বোন সাবরিনা ইয়াসমিন মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ফেসবুক পেজে প্র্রথমে ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ পান। আহাজারি করে তিনি বলে, ‘আমার ভাই কোনো অপরাধ করেনি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলেছে। তাই বলে এভাবে মেরে ফেলতে হবে? এই দেশে কি কোনো বিচার নেই? আমার ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। চাকরি করে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে বলেছিল। কিন্তু তারা সব শেষ করে দিছে।’

স্থানীয় লোকজন বলেন, ‘ওয়াসিম ছোটবেলা থেকে ডানপিটে ছিলেন। কোনো অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতেন। সবসময় সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখতেন।’

মোহাম্মদ ওয়াসিমের ফেসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা যায়, নিহত হওয়ার ছয় ঘণ্টা আগে তিনি স্ট্যাটাস দেন- ‘চলে আসুন ষোলশহর।’

১৮ ঘণ্টা আগে তিনি লাঠিসোটা হাতে কিছু যুবকের সঙ্গে সেলফি তুলে পোস্ট দেন- ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে আমার প্রাণের সংগঠন। আমি এই পরিচয়ে শহিদ হব।’

এদিকে ওয়াসিম নিহত হওয়ার খবরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাঈদী রহমানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়। ‘ওয়াসিম মরলো কেন, জবাব চাই, জবাব চাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’সহ নানা স্লোগানে মিছিলটি পেকুয়া চৌমুহনীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।


আরো সংবাদ পড়ুন...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর