সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে মঙ্গলবার বিকেলে মিন্টুকে আটক করা হয়। পরে তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
জানা যায়, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে সাইদুল করিম মিন্টুর যোগাযোগ ছিল। এ ছাড়া গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুর সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল তার। এসব বিষয়ে সাইদুল করিম মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি।
এদিকে মিন্টুকে আটকের খবর ঝিনাইদহে ছড়িয়ে পড়েছে। ঝিনাইদহে তার বাসায় গিয়ে কারও সঙ্গে দেখা করা বা কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরিবারের কেউ সাংবাদিকদের কথা বলতে চাননি।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান বলেন, ‘আপনাদের মতো আমরাও মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারছি যে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে ডিএমপির ডিবি পুলিশ আটক করেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলতে পারছি না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপু বলেন, ‘বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আমাদের মিটিং ছিলো। মিটিং ডেকেছিলেন সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। কিন্তু তিনি মিটিংয়ে উপস্থিত হননি।
‘মিটিং চলাকালে হঠাৎ দেখি নেতাকর্মীরা কানাঘুষা করছেন। তারাই আমাকে বললেন যে এমপি আনার হত্যার ঘটনায় সেক্রেটারি আটক হয়েছেন। তবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে নাকি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে সে ব্যাপারে এখন কিছু বলতে পারছি না।’
সংসদ সদস্য আনার হত্যার ঘটনায় এর আগে ৬ জুন রাতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া থেকে আটক করে নিয়ে যায় ডিএমপির ডিবি পুলিশ। এর দুদিন পর সংসদ সদস্য আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে করা অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে।
প্রসঙ্গত, সংসদ সদস্য আনার ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। সেখানে গিয়ে ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মন্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে ওই বাড়ি থেকে বের হন তিনি। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন আনোয়ারুল আজিম আনার। বাড়ি থেকে বেরুনোর পাঁচ দিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এই সংসদ সদস্যের।
এদিকে ২২ মে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে কলকাতার পাশের নিউটাউন এলাকায় সঞ্জিভা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর কক্ষে সংসদ সদস্য আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।
চাঞ্চল্যকার এই হত্যাকাণ্ড তদন্তে নেমেছে দুই দেশের পুলিশ। আটক করা হয়েছে পাঁচজনকে। ইতোমধে গোয়েন্দা পুলিশের টিম ভারত ও নেপাল সফর করেছে।
২৮ মে সন্ধ্যায় সঞ্জিভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়। তবে এগুলো আনারের মরদেহের অংশবিশেষ কি না সেটা এখনও নিশ্চিত করেনি পুলিশ।
আনার-কন্যা ডরিনের করা হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাহাজি ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানকে দুদফা রিমান্ডে নেয়া হয়।
আর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের আদালত। এছাড়া বর্তমানে কলকাতা পুলিশের হেফাজতে থাকা সিয়ামের বিরুদ্ধে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আমানের সহযোগী সাইফুল মেম্বারকেও রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।