মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাওঁ বাজারের ৩ রাস্তার মুড়ে বসে জুতা সেলাই করেন ৪৫ বছর বয়সী বিজয় রবি দাশ। বাপ-দাদারা জুতা সেলাই করতেন, তাদের পরে তিনিও একই পেশায় কাজ করছেন। এই পেশায় কাজ করে পাঁচ সদস্যের পরিবার এখন আর চলছে না। মানুষের এখন টাকা হয়ে গেছে। কেউ ছেঁড়া জুতা সেলাই করে পায়ে দেয় না। এখন পর্যন্ত তিনি সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও পাননি। সাতঁগাও বাজারে কাজ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের জসমি গ্রামের বিজয় রবি দাশ।
এ সময় কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে, আলাপকালে ৪৫ বছর বয়সী বিজয় রবি দাশ বলেন জীবন সংসারের তাগিদে ২০০৪ সাল থেকে সাতগাঁও বাজার মোড়ে শুরু করেন জুতা, স্যান্ডেল, স্কুল ব্যাগ মেরামতের কাজ। বাজারের ওই মোড়ে প্রায় ২০ বছর যাবৎ জুতা, স্যান্ডেল, স্কুল ব্যাগ মেরামোতের কাজ করেছেন।
তিনি জানান, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ভিটেমাটি ছাড়া তার কোন জমি জায়গা নেই। জুতা, স্যান্ডেল, ব্যাগ, মেরামত করেই কোন রকমে খাইয়ে পরিয়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে আছেন। যতদিন জীবিত আছেন জীবন সংগ্রামে ততদিন এ পেশায় যুক্ত থাকবেন বলে জানান ৪৫ বয়সী বিজয় রবি দাশ।
কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মুচি সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা ছোটবেলা থেকে মুচি হিসেবে কাজ করে আসছেন কিন্তু এখন অন্যকোনো কাজ করতে পারে না, কেবল তারাই এই পেশা ধরে রেখেছেন। তবে তাদের বেশিরভাগই চান না সন্তানরা এই কাজ শিখুক। কারণ এই পেশায় কাজ করে সংসার চালানো বেশ কষ্টসাধ্য।
তারা জানান, অনেকেই এখন এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। সারা দিন কাজ করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। এই টাকায় সংসার চালানো কঠিন।
এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ বাজারের মুচি বিকুল চন্দ্র বলেন, ৪৫ বছর ধরে এই কাজ করে সংসার চালিয়েছি। কিন্তু এখন আর পারছি না। সারা দিন কাজ করে বাড়িতে যাওয়ার সময় চাল ডাল নিয়ে যেতে পারি না। একই ভাবে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর, আদমপুর, ভানুগাছ চৌমুহনী, উপজেলা সদর, পতনউষার, মুন্সীবাজার এলাকার মুচি সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা অভাব অনটনের কথাগুলো জানান।
স্থানীয় ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া জুয়েল বলেন, বিজয় দাশ জুতা সেলাইয়ের কাজ করে খুব কষ্টে সংসার চালায়।সারাদিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে যা আয় হয়, তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলানো দায় হয়ে পড়ে। তাকে সহযোগিতায় সবার এগিয়ে আসা উচিত। বিশেষ করে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসলাম উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সুত্র ধর বলেন, তারা যে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা তারা পান না তা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তাদের বলবেন আমার অফিসে এসে দেখা করতে। তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।