কিশোরগঞ্জ শহরে কৃষ্ণচূড়া গাছের সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে পড়ছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন লাল রঙের পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে মাথা উচুঁ করে। কৃষ্ণচূড়া তার রক্তিম আভা ছড়ানোর মাধ্যমে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে অপরুপ রুপে।
কৃষ্ণচূড়া ফুলের হালকা লাল আভা প্রকৃতিকে করেছে নয়নাভিরাম, যা শহরের নাগরিকদের হৃদয়-মন কেড়ে নিয়েছে। এর অপরূপ সৌন্দর্য দেখে পথচারী থমকে দাঁড়ায়। গ্রীষ্মকালের শুরুতে এই ফুল ফোটে। তখন প্রকৃতিতে সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতিপ্রেমীরা সৌন্দর্য উপভোগ করেন, গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেন। কৃষ্ণচূড়ার এ অপরূপ রূপে মোহিত হয়ে ওঠে ভাবুকমন।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের এক সময় কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছের প্রচুর দেখা মিলতো। প্রতিবছর গ্রীস্মে ফুলফুটে প্রকৃতিতে শোভা বর্ধন করতো। কালের আবর্তে সেই কৃষ্ণচূড়ার গাছ এখন অনেকটাই কমে গেছে। তারপরও জেলা শহরের সৈয়দ নজরুল চত্বর ও গুরুদয়াল সরকারি কলেজের মুক্তমঞ্চসহ বিভিন্ন স্থানে কৃষ্ণচূড়া শোভা পাচ্ছে।
রবিবার (০৫ মে) দুপুরে সরেজমিন জেলা শহরের সৈয়দ নজরুল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, কৃষ্ণচূড়া গাছে গাছে ফুটে থাকা লাল ফুল শহরকে রাঙিয়ে তুলেছে। নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে শহরবাসীকে। সেই সৌন্দর্যের ডাকে দাবদাহ উপেক্ষা করে বিকালে শহরবাসী জড়ো হয়েছে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে। আশপাশে বসে সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপশি আড্ডায় মেতে উঠেছেন তারা।
এছাড়া জেলা প্রশাসকের বাসভবন ও কার্যালয়ে, পুলিশ সুপারের বাসভবন ও কার্যালয়ে, পুলিশ লাইন এলাকায়, শিল্পকলা একাডেমি, এলজিইডি ভবনের সামনে, বিভিন্ন রাস্তার পাশে দেখা মিলছে এই রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়া গাছের। ফুলের রক্তিম জাগরণ পথচারীদের মুহূর্তের জন্য হলেও শিহরণ জাগায়। দুপুরের রোদে দেয় প্রশান্তির ছায়া।
জেলা শহরের নগুয়া এলাকার নাসিম মিয়া বলেন, শহরের বিভিন্ন সড়কে এখন কৃষ্ণচূড়া ফুটে আছে। প্রকৃতিতে এখন ভিন্ন রঙ ধরেছে। দূর থেকে দেখতে ঠিক লাল পাহাড়ের মত মনে হয়। অপরূপ শোভায় শোভিত হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। যে কাউকে আকৃষ্ট করছে সড়কগুলো। কৃষ্ণচূড়া যদি আরো বেশি গাছ থাকতো তাহলে এই এলাকাটি একসময় পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠতো।
পথচারী উম্মুন ওয়ারা শারমিন বলেন, আমি প্রায় প্রতিদিনই এই পথ ধরে হাঁটি। কখনো সকালে অথবা বিকেলের দিকে হাঁটতে আরও বেশি ভালো লাগে। তখন কেমন ফুলে ফুলে লাল হয়ে থাকে রাস্তা আর রাস্তার ধারের গাছগুলো। গ্রীষ্মের এই নিস্প্রাণ রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরেছে আপন মহিমায়। যেন লাল রঙে কৃষ্ণচূড়ার পসরা সাজিয়ে বসে আছে প্রকৃতি।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পৌর মহিলা কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ। কৃষ্ণচূড়া মূলত আফ্রিকার মাদাগাস্কার ফুল গাছ। এটি সম্ভবত ১৮২৪ সালে সেখান থেকে প্রথমে মুরিটাস ও ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ায় বিস্তার লাভ করে। কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখতে অত্যন্ত সুন্দর ও পরিবেশবান্ধব। চমৎকার পত্রপল্লবসহ গভীর লাল ফুলের জন্য এই গাছের আলাদা কদর রয়েছে। এছাড়া কৃষ্ণচূড়ার রয়েছে ভেষজ গুণ। বৃক্ষ প্রেমিরা কৃষ্ণচূড়ার ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকেন।
কিশোরগঞ্জের লোকসংস্কৃতির গবেষক জাহাঙ্গীর আলম জাহান বলেন, প্রকৃতিতে এখন মনোমুগ্ধকর রঙ ছড়িয়েছে কৃষ্ণচূড়া। কিশোরগঞ্জে একসময় প্রচুর পরিমাণে কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখা যেত। গ্রীষ্মকালে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলত। কালের পরিক্রমায় আবাসন ব্যবস্থার কারণে অনেক গাছ কাটা পড়েছে। সৌন্দর্য উপভোগ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ অভিযান চালাতে হবে।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পৌর মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাদেকুর রহমান বলেন, প্রকৃতিতে এখন মনোমুগ্ধকর রঙ ছড়িয়েছে কৃষ্ণচূড়া। কিশোরগঞ্জে একসময় প্রচুর পরিমাণে কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখা যেত। গ্রীষ্মকালে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলত। কালের পরিক্রমায় আবাসন ব্যবস্থার কারণে অনেক গাছ কাটা পড়েছে। সৌন্দর্য উপভোগ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় শহরে কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ অভিযান চালাতে হবে।
সদর উপজেলা সহকারী বন কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, কৃষ্ণচূড়া শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ, যা পাখিদের আশ্রয়স্থল। এই গাছ জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাটি ক্ষয়রোধ করে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, কৃষ্ণচূড়া অতি পরিচিত বৃক্ষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র এসব বৃক্ষ জন্মালেও সান্তাহারে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এসব গাছের যত্ন নেওয়া হলে গ্রীষ্মকালে প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও বাড়বে।