শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম :
দীর্ঘদিনের জমি বিরোধের অবসান; সাংবাদিক এম ইদ্রিস আলীর উদ্যোগে সমাধান সবুজে ঘেরা মৌলভীবাজার জেলাকে আরও সবুজময় করতে চাই-জেলা প্রশাসক কমলগঞ্জে বিদেশী সিগারেটসহ গ্রেফতার-২ ট্যুরিস্ট কমিউনিটি পুলিশিং সভা অনুষ্ঠিত ভারী বৃষ্টি ও ভূমিধসের আশঙ্কা আবহাওয়া অধিদপ্তরের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফোরাম যুক্তরাজ্য কমলগঞ্জ উপজেলা শাখার ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন ভুলে অন্য রেলস্টেশনে নেমে ‘ধর্ষণের শিকার’ কিশোরী, যুবক গ্রেপ্তার খুলনায় টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন জুলাই যোদ্ধাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ২৫ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল সারাদেশে পাথর কোয়ারি চলবে আর সিলেটে চলবে না, এটা হবে না : বিভাগীয় কমিশনার

সিলেটে ইফতারি প্রথা: দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

ডেস্ক রিপোর্ট / ৯১ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০২৪

সিলেটে ইফতার প্রথা পুরাতন এক ঐতিহ্য। বাবার বাড়ি থেকে রমজান মাসে মেয়ের বাড়িতে ইফতার পাঠানো হয়। সে ইফতার শুধু মেয়ের বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা। ছেলের শ্বশুড়বাড়ি থেকে যেদিন ইফতার আসবে, সেদিন বন্ধুবান্ধব আর আত্মীস্বজনকে দাওয়াত দেওয়া হয়। সেই সাথে একটি নীরব প্রতিযোগিতা চলে- কার শ্বশুরবাড়ি থেকে কত বেশি আইটেমের ইফতার এলো। কে তার শ্বশুরবাড়ির ইফতার কয়শত মানুষকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াল। যার শ্বশুরবাড়ি থেকে যত বেশি ইফতার আসে তার তত সুনাম। তেমনি যে মেয়ের বাবার সে সক্ষমতা কম, তিনি ইফতারি দিয়ে খুশি করতে না পারলে- অনেক ক্ষেত্রে কথা শুনতে হয়।

সিলেট বিভাগের প্রচলিত অনেক প্রথার মধ্যে মেয়ের পিতার গলার কাটা হয়ে আজও ঝুলে আছে ইফতারি প্রথা। রমজান আসলেই চিন্তা করতে হয় কি করে মেয়ের বাড়িতে ইফতার পাঠানো হবে সেসব বিষয়ে। মেয়ের সম্মান রক্ষার্থে শুধু ইফতার পাঠানোর টাকা যোগাড় করতে অনেক বাবা মায়ের ধার দেনা করতে। অনেক বাবা-মায়ের ইফতারের এই আয়োজনের জন্য নিজের গরু ছাগল, এমনকি হাঁস মোরগও বিক্রি করেন। সুদে টাকা এনে তা মেটাতে বছর পার তা শুধ করতে হচ্ছে অনেককে।

তরুণ প্রজন্ম এই প্রথার বিলুপ্তি চায়। তারা এটাকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, মেয়ের বাড়িতে ইফতার দেওয়াটা অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের জন্য মেয়ের মুখ বড় করতে গিয়ে বিত্তের প্রদর্শনীতে পরিণত করা হচ্ছে। আবার দরিদ্র মা-বাবাকে এই প্রথা পালন করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হতে হয়।

সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ অনেকের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে মেয়ের বাড়িতে ইফতারের সংস্কৃতি বহু বছর ধরেই চলছে। কিন্তু এটি চাপিয়ে দেওয়া সংস্কৃতি নয়, বরং তা ছিল বিত্তশালী বাবার মেয়ের প্রতি ভালোবাসার একটা প্রকাশ। কিন্তু বর্তমানে এসে উল্টোটা হচ্ছে। আমি মনে করি এটি বিলুপ্তি বা চালু রাখা এই তর্কে না যেয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িকে বোঝানো ভালোবাসা প্রকাশে বাধ্য করতে নয় বরং তার সামর্থের বা ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া। এটাকে অমানবিক না করে মানবিক সংস্কৃতিতে দেখা বোধহয় যুক্তিযুক্ত হবে।যুগ যুগ ধরে চলা এমন অমানবিক প্রথা সমাজ থেকে নির্মূল করতে সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে এখনই সচেতন হতে হবে।

সিলেটের অনেক আলেম সমাজগণ বলেন, বাবার বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়িতে রমজানে ইফতার পাঠানো আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি কুসংস্কার। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে এই কুপ্রথা এখনও শেকড় ঘেড়ে আছে। অনেকে মনে করেন, মেয়ের বাবার বাড়ি থেকে বাহারি ইফতার পাঠালে শ্বশুরবাড়িতে মেয়ের মুখ উজ্জ্বল হয়। তাই বিত্তবানরা জৌলুসপূর্ণ ইফতারি পাঠান। আবার অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ইফতার না পাঠালে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছ থেকে কটুকথা শুনতে হয়, তাই বাধ্য হয়ে অনেক বাবা-মা ধারদেনা করে হলেও মেয়ের বাড়িতে ইফতার পাঠান।

অনেক ইসলামি স্কলার বলেন, বিত্তশালীরা যদি স্বেচ্ছায়ও দিয়ে থাকে; তবুও এতে লুকিয়ে থাকে লৌকিকতা। আর লৌকিকতাকে সূক্ষ্ম শিরক আখ্যা দিয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জামানায় রিয়াকে ছোট শিরক গণ্য করতাম।’ -মুসনাদে উমার: ২/৭৯৬

এই ইফতার আদান-প্রদানে প্রথা হয়তো জুলুম, নতুবা শিরক। এই দুই প্রকারের কোনো এক প্রকার হবেই। এর যে প্রকারেরই হোক না কেন উভয়টিই কবিরা গোনাহ। আর যদি এটাও না হয়- তবে এটা একটি প্রচলিত কুপ্রথা। যার অনুমোদন ইসলামে নেই। মোদ্দাকথা, এমন ইফতার প্রথার কোনো ভিত্তি ইসলামে নেই। উপরন্তু এর কারণে যদি কাউকে কোনো প্রকার নির্যাতন বা তাচ্ছিল্য করা হয়- তবে সেটা তো আরও কঠিন গোনাহ। কেননা, জালেমকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন না।

উল্লেখ্য, তিন কারণে ইফতারি প্রথাকে না বলুন। (১) এটা আইন বিরোধী (২০) সামাজিক কুসংস্কার (৩) অনৈসলামিক প্রথা যা হিন্দু ধর্ম থেকে এসেছে। বাংলাদেশের যৌতুক বিরোধী আইন অনুযায়ী ইফতারি নিষিদ্ধ। যদিও এই বিষয়ে আমরা অনেকে জানিনা, এই নিয়ে কখনো কোন মামলা হয়নি, বিষয়টি ওই ভাবে আলোচনায় আসেনি। আইনের বিভিন্ন ধারা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়– ইফতারি প্রথা যৌতুকের মধ্যে পড়ে যায়। একজন সুনাগরিকের উচিত- আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। সুনাগরিক হতে গেলে বা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে গেলে ইফতারী প্রথাকে না বলতে হবে।


আরো সংবাদ পড়ুন...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর