মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৩ অপরাহ্ন

ভ্যানে মরদেহের স্তূপ, প্রাথমিকভাবে চার পুলিশ শনাক্ত

অনলাইন ডেস্ক / ২৪ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
উপরে বাঁ থেকে- আরাফাত, একসঙ্গে আরাফাত ও রেজাউল; নিচে বাঁ থেকে- বিশ্বজিৎ ও কনস্টেবল মুকুল।

রাজধানীর অদূরে সাভারের আশুলিয়া থানা এলাকায় ছাত্র-জনতার গুলিবিদ্ধ মরদেহ ভ্যানে স্তূপ করে রেখে আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে দেশজুড়ে। এ ঘটনার গোপনে ধারণকৃত এক মিনিট ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।

বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ভিডিওটিতে থাকা ঢাকা জেলা ডিবি ও থানা পুলিশের চার সদস্যকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেছে। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আশুলিয়া থানা পরিদর্শন শেষে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্তের কথা নিশ্চিত করেছেন।

ভিডিওতে থাকা চার পুলিশ সদস্যের বর্তমান ছবি, বিভিন্ন উপাত্ত ও পুলিশের দেয়া তথ্যে জানা যায়, ভিডিওতে লাশের স্তূপের পাশে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখা গেলেও তাদের মধ্যে চারজনকে স্পষ্ট দেখা যায়। তারা সবাই ঢাকা জেলা পুলিশে কর্মরত।

ভিডিওর প্রথম অংশে মরদেহের স্তূপের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পুলিশের ভেস্ট ও হেলমেট পরিহিত ব্যক্তি ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। তার বাড়ি বরিশালের হিজলা উপজেলায়।

আর ডিবির এই কর্মকর্তার পাশেই হেঁটে যাওয়া মুখে হালকা দাড়ি থাকা ব্যক্তি ডিবি পুলিশের কনস্টেবল রেজাউল করিম।

ভিডিওর শেষাংশে থাকা হাতে হেলমেট ও পুলিশের ভেস্ট পরিহিত ব্যক্তি আশুলিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বিশ্বজিৎ রায়। তার সামনে কচুপাতা রঙের গেঞ্জি পরিহিত একই থানার ভেস্ট পরিহিত কনস্টেবল মুকুলের উপস্থিতিও প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ভিডিওতে দেখা পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারে আশুলিয়া থানার বেশ কয়েকজন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নাম প্রকাশে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ভিডিওতে থাকা ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত, ডিবি পুলিশের কনস্টেবল রেজাউল করিম, আশুলিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুলকে শনাক্ত করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুকুলের ছবিতে এসআই আবুল হাসানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে বলেও জানান তারা।

তবে ভিডিওতে কনস্টেবল মুকুলের স্থানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল হাসানের নাম যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এসআই আবুল হাসানের দাবি, ঘটনার আগের দিন ৪ আগস্ট রাতভর ডিউটি শেষে তিনি সকালে বাসায় ফিরে গেছেন। ৫ আগস্ট ডিউটি না থাকায় আশুলিয়া থানায় তিনি আসেননি।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘আমার কোনো অস্ত্র নাই। ভিডিওতে থাকা ওই ব্যক্তি আমি না। এটা অন্য কেউ।

কনস্টেবল মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমবার তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন। পরে বার বার চেষ্টা করেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

এছাড়া অভিযুক্ত ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন ও কনস্টেবল রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

এদিকে গত রোববার আশুলিয়া থানা পরিদর্শনে এসে এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ।

তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটি এনালাইসিস করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ৪ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্তও করা হয়েছে। আমরা তাদেরকে অল্প সময়ের মধ্যে সবার সামনে তুলে ধরব।’

প্রসঙ্গত, একটি ভ্যানে মরদেহ স্তূপ করার ভিডিওটি গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ভাইরাল হওয়া এক মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, দুজন পুলিশ সদস্যের একজন একটি মরদেহের হাত ও আরেকজন পায়ের দিক ধরে চ্যাংদোলা করে ভ্যানে ছুড়ে মারছে। এর আগেই বেশকিছু যুবক-তরুণের মরদেহ ভ্যানে স্তূপ করে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় তারা। সবশেষ মরদেহটি ভ্যানে স্তূপের ওপর ছুড়ে ফেলে পুরোটা একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়।

শেষে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত, আশুলিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুলকে দেখা যায়।

ভিডিওর এক মিনিট ৬ সেকেন্ডে একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় যুবলীগের ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি প্রার্থী ও ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের। সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার সামনে।


আরো সংবাদ পড়ুন...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর