জনসংখ্যার অনুপাতে পৃথিবীর বৃহৎ দেশ ভারত। ১ জুন শেষ হলো দেশটির ১৮তম লোকসভা নির্বাচন। ৭ ধাপে এই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করতে ৪৪ দিন সময় লেগেছে। আজ মঙ্গলবার এ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। আজ জানা যাবে কে বসতে যাচ্ছেন দিল্লির মসনদে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের কার ভাগ্যে কী আছে সেটাও জানা যাবে আজ।
আজ স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ভোট গণনা। জানা যাবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের শাসন উঠবে কার হাতে। ভারতের লোকসভায় রয়েছে ৫৪৩টি আসন। ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়েছে দেশটিতে। নির্বাচন কমিশন বলছে, চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে রেকর্ড পরিমাণ ৬৪ কোটিরও বেশি মানুষ ভোট দিয়েছে। এসব ভোটারের মধ্যে ৩১.২ কোটি ছিল নারী ভোটার। এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় নির্বাচনে ৬৮ হাজারেরও বেশি মনিটরিং টিম এবং দেড় কোটি পোলিং ও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত ছিল বলে জানিয়েছে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার গতকাল সোমবার জানান, জম্মু ও কাশ্মীরে চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে ৫৮.৫৮ শতাংশ এবং উপত্যকায় ৫১.০৫ শতাংশ।
ভারতজুড়ে এরই মধ্যে ভোট গণনা কেন্দ্রগুলোতে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তিন স্তরের এই ব্যবস্থায় প্রত্যেক গণনা কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে থাকছে ১৪৪ ধারা। কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে থাকছে সিসি ক্যামেরার নজরদারি। কেন্দ্রীয় বাহিনী, রাজ্য পুলিশ সদস্যা ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের মাইক্রো অবজারভার নিয়োজিত থাকবেন গণনা কেন্দ্রে।
সকাল ৮ থেকে ভোট গণনা শুরু হবে। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম গণনা শুরুর আগে পোস্টাল ব্যালট গণনা শুরু হবে। এরপর ভোটারের সংখ্যার অনুপাতে ইভিএম গণনার কাজ হবে। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নিজস্ব এজেন্ট থাকবেন কাউন্টিং স্টেশনে। থাকবেন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং বিদেশি পর্যবেক্ষকও। দীর্ঘ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দেশটিতে এবার ক্ষমতায় আসার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। যদিও এই দাবি মানতে নারাজ প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস এবং অন্য বিরোধীরা।
ভারতে এবারের লোকসভা নির্বাচনে ছয়টি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল ছাড়াও আড়াই হাজারের মতো প্রাদেশিক রাজনৈতিক দল নিজস্ব প্রতীকে লড়েছেন। নির্বাচনী যুদ্ধে সামিল হয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার প্রার্থী।
বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে তুমুল বিতর্ক
ভারতের লোকসভার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করার আগে বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে দেশটিতে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। দেশটির অধিকাংশ মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যমের যে বুথ ফেরত সমীক্ষা দেখানো হয়েছে, তাতে বলা হচ্ছে বিপুল সংখ্য়াগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছে মোদি সরকার।
বস্তুত, অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষা বলছে, বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ ৩৫০-এর বেশি আসন পেতে চলেছে। ৫৪৩ আসনের লোকসভায় ২৭২ ম্যাজিক ফিগার। যে দল ২৭২টি আসন পাবে, সে দলই সরকার গঠন করতে পারবে। ২০১৯ সালে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৩০৩টি আসন। এনডিএ মিলে পেয়েছিল ৩৩০-এর বেশি আসন। এবার সেই রেকর্ড ভাঙবে বলে বুথ ফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত।
দেশটিতে রাজ্য ধরে ধরে সমীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে বিজেপি ২৪ থেকে ২৭টি আসন পাচ্ছে। কোনো কোনো সমীক্ষায় বিজেপিকে দেওয়া হয়েছে ৩০-এর বেশি আসন। পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি লোকসভা কেন্দ্র আছে। ২০১৯ সালে বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি আসন। শাসকদল তৃণমূল জিতেছিল ২২টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছিল দুটি আসন। এরপর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল আগের চেয়ে খারাপ হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বুথ ফেরত সমীক্ষায় যে ফল দেখানো হচ্ছে, বাস্তবের সঙ্গে তার মিল কম।
ভারতের ভোট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে যে ফলাফল দেখানো হচ্ছে, আমার মনে হয় না তা বাস্তবে হবে। আমার ধারণা, তৃণমূল এবং বিজেপি প্রায় সমান সমান আসন পাবে। অর্থাৎ, ২০১৯-এর ফলাফলের চেয়ে বিশেষ কোনো পরিবর্তন হবে না। বিশ্বনাথ মনে করেন, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকার ফিরবে। সেখানেও আসন সংখ্যা আগেরবারের চেয়ে বিশেষ বদলাবে না।
সাংবাদিক এবং দিল্লি প্রেসক্লাবের প্রধান গৌতম লাহিড়ী মনে করেন, বুথ ফেরত সমীক্ষায় যে নম্বর দেখানো হচ্ছে, সেই নম্বরেই ভুল আছে। কর্ণাটকে কংগ্রেস যতগুলো আসনে লড়ছে, তার চেয়ে বেশি সিট দেখানো হয়েছে একটি সমীক্ষায়। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, বুথ ফেরত সমীক্ষা নিরপেক্ষ নয়, রাজনৈতিক মদদপুষ্ট। গৌতমের বক্তব্য, এবারের ভোটে পুরো দেশেই অ্যান্টি ইনকমবেন্সি অর্থাৎ, শাসকবিরোধী মনোভাব দেখা গেছে ভোটারদের মধ্য়ে। ফলে বিজেপি সরকার গঠন করতে পারবে না বলেই মনে হচ্ছে। আর পশ্চিমবঙ্গে যে ফলাফল দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটা ঘটবে।
বিজেপি বুথ ফেরত সমীক্ষাকে স্বাগত জানালেও কংগ্রেস ইতোমধ্যেই এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কংগ্রেস হাইকমান্ড কর্মীদের জানিয়েছে, ভোট গণনার আগে বিরোধী শক্তিকে মানসিক চাপে ফেলতেই গণমাধ্যমকে ব্যবহার করেছে বিজেপি। বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। গণনার দিন কর্মীদের শেষ পর্যন্ত গণনাকেন্দ্রে থাকার হুইপ জারি করেছে কংগ্রেস।
তৃণমূলসহ ইন্ডিয়া জোটের একাধিক দল একই কথা বলেছে। তাদের ভাষ্য, বুথ ফেরত সমীক্ষার ক্ষেত্রেও বিজেপি মিডিয়াকে ব্যবহার করেছে। যে ফলাফল দেখানো হচ্ছে, বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই।