মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বানভাসি মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কারণ বন্যায় কারও ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারও ঘরে পানি উঠেছে। এই অবস্থায় ঘরে টিকতে না পেরে তারা বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। কেউ আবার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে উঠেছেন।এতে জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, উপজেলার ৩৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে সাড়ে চারশতাধিক পরিবার উঠেছে। এসব কেন্দ্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ। পুকুর ভেসে বেরিয়ে গেছে মাছ। এই অবস্থায় প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘরে ঠিকতে না পেরে অনেকে বাধ্য হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছেন। কেউ আবার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে উঠেছেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে মানুষজন সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন। অবশ্য বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন বাড়তি টাকা দিয়ে নৌকায় চলাচল করছেন।
বন্যা কবলিত কয়েকটি এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে বন্যার্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘরে পানি উঠায় তারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ঘরে টিকতে না পেরে কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন। কেউ আবার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাচ্ছেন। অনেক আশ্রয় কেন্দ্রের সামনেও পানি রয়েছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে মানুষ গাদাগাদি হয়ে থাকছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো চাল ও শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় কম বলে বন্যার্তরা জানিয়েছেন। তবে নিম্নাঞ্চলের অনেক বন্যাকবলিত মানুষজন কোনো ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। ফলে তারা তাদের অসহায়ত্বের কথা কাউকে বলতেও পারছেন না। এমনকি কেউ তাদের কোনো খোঁজখবরও নিচ্ছে না।
ছিদ্দেক আলী উচ্চ বিদ্যালয়, আজিমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা কয়েকজন মানুষ জানান, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের শুকনো খাবার ও ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি। যে খাবার দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। পানি থাকায় কোনো ধরনের কাজকর্মও তারা করতে পারছেন না। ফলে অনেকটা বেকার বসে সময় কাটাতে হচ্ছে। অবশ্য কেউ কেউ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহী করছেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজরাতুন নাঈম জানিয়েছেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে বলে মনে হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আরও কয়েকটি পরিবার উঠেছে। এসব কেন্দ্রে সাড়ে চারশতাধিক পরিবার আছে। তাদের শুকনো খাবারের পাশাপাশি চাল দেওয়া হচ্ছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। সার্বক্ষণিক পানিবন্দি মানুষের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’