টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বিশ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর নিন্মাঞ্চল। ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশংকা করা হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন অবস্থায় আছে নগরও। নগরের অনেক রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১২টার পরও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বেড়েই চলছে পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে সিলেটের ৪টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত সিলেট জেলায় প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। তবে মঙ্গলবার স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, জেলায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদের দিন কোরবানির পশুর মাংস, শুকনো খাবার, সেলাইন ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ শাহ মো সজিব জানান, সিলেটে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৪৪ মি.মি বৃষ্টি হয়েছে। আর ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১২ মিলিমিটার। আগামী দুইদিন সিলেটে টানা বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে গত ২৭ মে ঢলে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। এতে জেলার সব উপজেলায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ফের বন্যা কবলিত হয়েছে সিলেট।
সোমবার রাতে সিলেট জেলা প্রশাসন জানায়, জেলার ১৩টির মধ্যে ১০টি উপজেলার প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ পানিবন্দী। তবে বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকায় বাড়ছে প্লাবিত এলাকা। ইতোমধ্যে জেলার কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তৃর্ন এলাকা তলিয়ে গেছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার মামার দোকার এলাকার ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রবল বেগে ঢল নামছে। এলাকার অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে।
এদিকে, গতকাল সোমবার ঈদের দিন সকালে টানা বৃষ্টিতে নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে ঈদের জামাত ও কোরবানি নিয়ে বিপাকে পড়েন নগরবাসী। তবে দুপুরের পর বৃষ্টি থামলে নামতে শুরু করে নগরের পানি। কিন্তু মঙ্গলবার ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় সিলেটে বৃষ্টিপাত। ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও বাড়তে শুরু করেছে সিলেট নগরের পানি। ফলে আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে নগরে।
নগরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা কাইয়ুম আহমদ বলেন, পানিতে বাসা ও সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল কোরবানি দিতে পারিনি। গতকাল থেকে আজ পরিস্থিতি আরও খারাপ। পানি দ্রুত বেগে বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগরের সব নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এছাড়া যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত।
এছাড়া নগরের মধ্যে অনেক সড়কে পানি রয়েছে। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান পানির নিচে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জানায়, এ সময় পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা থেকে ১৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীটির সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার এবং নদীর সারিগোয়াইন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ইন্ডিয়া মেট্রোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত ৩৯৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে দ্রুত বাড়ছে সিলেটের নদ-নদীর পানি। সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। জেলায় ৫৩৮ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।