সংসদীয় আসন-৮৪ (ঝিনাইদহ-৪)-এর সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের পদ শূন্য ঘোষণা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। আনার ভারতের কলকাতায় ‘হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এমন খবর মিললেও তার মরদেহ এখনও পাওয়া যায়নি।
ভারত বা বাংলাদেশ সরকারও এমপি আনারের মৃত্যুর বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানায়নি। অবশ্য বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান হত্যাকাণ্ডের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংসদ সদস্য আনারের মৃত্যুর নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় আসনটি এখনই শূন্য ঘোষণার পক্ষপাতী নয় সংসদ সচিবালয়।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অন্য সংসদ সদস্যদের মৃত্যুর ঘটনার চেয়ে এই ঘটনাটি একেবারেই আলাদা। তাই অন্তত একটি অকাট্য প্রমাণ হাজির না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে অপেক্ষা করতে চায় সংসদ সচিবালয়। তবে ৫ জুন অনুষ্ঠেয় বাজেট অধিবেশনের আগেই বিষয়টির সুরাহা হবে।
কোনো সংসদ সদস্যের মৃত্যু, পদত্যাগ বা অন্য কোনো কারণে সংসদের কোনো আসন খালি হলে সংসদ সচিবালয় থেকে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে আসনটি শূন্য (মৃত্যুর তারিখ থেকে) ঘোষণা করা হয়। পরে গেজেটের কপি পাঠানো হয় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে। নির্বাচন কমিশন ওই শূন্য আসনে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের আয়োজন করে।
তবে অন্য মৃত্যুর ঘটনা এবং আনোয়ারুল আজীম আনারের ‘মৃত্যুর’ ঘটনা এক নয়। অতীতে যেসব সংসদ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন বা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তার প্রমাণ হিসেবে তাদের মরদেহ পাওয়া গেছে। দাফন বা সৎকার হয়েছে। কিন্তু ভারতে ‘হত্যাকাণ্ডের’ শিকার হওয়া আনোয়ারুল আজীম আনারের মৃত্যুর ঘটনাটি কোনো সোর্স থেকে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মরদেহও পাওয়া যায়নি। এমনকি কবে মারা গেছেন সেটাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অবশ্য আনারের হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশের দিনই (২২ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন।
ঝিনাইদহ-৪ আসন শূন্য ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা এখন কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। আমরা আরও অপেক্ষা করব।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা খুবই ব্যতিক্রমধর্মী। আগে এ ধরনের ঘটনা কখনোই ঘটেনি। আমাদের সামনে কোনো নজির নেই। কার্যপ্রণালি বিধিতেও এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। এটা তো অনুমাননির্ভর।’
হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের প্রসঙ্গ টেনে স্পিকার বলেন, ‘তাদের হত্যার বিষয়টি দৃশ্যমান ছিল। তাদের ডেডবডি পাওয়া গেছে এবং জানাজা হয়েছে। সে হিসাবে তাদের আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই সময় সরকারের পক্ষ না জানালেও সংসদ নিশ্চিত হয়েছিল যে তারা মারা গেছেন। কারণ সবই চোখের সামনে ঘটেছিল। কাজেই ওই ঘটনার সঙ্গে এটা মেলানোর কোনো সুযোগ নেই।’
আনারের বিষয়ে স্পিকার আরও বলেন, ‘এখানে সমস্যা হচ্ছে তার দেহ পাওয়া যায়নি। তাই আমরা অপেক্ষা করছি। আমাদের কোনো একটা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানতে হবে। ওনার মৃত্যুসনদ বা কোনো কাগজ আমাদের কাছে আসতে হবে, যেখানে প্রমাণ হবে উনি মারা গেছেন। না হলে আমরা কীভাবে বুঝব উনি মারা গেছেন? সেটার প্রমাণটা কী? শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।
সংসদ অধিবেশনের আগে কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হবে ৫ জুন। সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন বলেও স্পিকার জানান। ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। বাজেট অধিবেশন শুরুর আগেই বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট হওয়া যাবে বলে আশা করেন তিনি।