শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৫৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম :

১৫৩ রোহিঙ্গার অবৈধ জন্ম নিবন্ধন, মৌলভীবাজারে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বরখাস্ত

সালাহউদ্দিন শুভ, প্রতিদিনের মৌলভীবাজার / ৩৩৩ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : বুধবার, ১ মে, ২০২৪
বরখাস্ত মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস।

১৫৩ রোহিঙ্গাকে অসৎ উদ্দেশ্যে জন্ম নিবন্ধনের কারণ দেখিয়ে জন্য মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার এক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গত ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব এ.কে.এম আনিছুজ্জামানের স্বাক্ষারিত প্রজ্ঞাপনে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাসকে বরখাস্তের এই আদেশ দেয়া হয়। তবে এই বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কোন স্পষ্ট বক্তব্য দেননি।

ইউনিয়ন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর শরিয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আসিয়া বিবি (২৭) নামে একজন রোহিঙ্গা নারী পাসপোর্ট করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হন। তার আইডি কার্ড না থাকায় জন্মনিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করতে যান তিনি। আসিয়া আক্তার যে নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করতে গিয়েছিলেন সেটি রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়ন থেকে নিবন্ধিত। যা গতবছরের ৯ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন কার্যালয় থেকে নিবন্ধিত হয়েছে। আটক ওই নারী কক্সবাজারের টেকনাফ থানার আলী যোহার ও আম্বিয়া খাতুন দম্পতির মেয়ে বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি যাচাই করার জন্য ওই সময় উধর্বতন কর্তৃপক্ষ মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাছে পাঠালে ইউএনও ফতেহপুর ইউনিয়নের সচিব পাপড়ি দত্তকে কার্যালয়ে ডেকে আনেন। পরে ওই ইউনিয়নের জন্মনিবন্ধনের আইডি নিষ্কৃয় করে রাখা হয়। ওই সময় কয়েকশত রোহিঙ্গা নিবন্ধন হয়েছে বলে ধারণা করেন সংশ্লিষ্টরা। যাচাই করে ওই সময়ের উপজেলার নির্বাহী অফিসার দেখতে পান ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৫৩টি ভুয়া নিবন্ধন হয়েছে। তারা সবাই রোহিঙ্গা হিসেবে সন্দেহ করেন। এব্যাপারে ফতেহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস রাজনগর রাজনগর থানায় সাধারণ ডায়রি (নং ৯৭৪) করেন।

অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, ১৫৩ রোহিঙ্গা জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কয়েক লক্ষ টাকার লেনদেনে এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এতে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস ও ডিজিটাল সেন্টারের কর্মকর্তা নয়ন গোপ্তাসহ কতিপয় আত্মগোপনে থাকা ব্যক্তিরা জড়িত আছেন। রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে জানিয়েছেন, জন্মনিবন্ধনের সার্ভারের কার্যক্রম ওটিপি ভিত্তিক। ওটিপি আসার পর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান যাচাই করে নিবন্ধনের সুপারিশ করতে হয়। তাই এখানে সংশ্লীষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া করা সম্ভব নয়। কঠোর নিরাপত্তা থাকা সত্তেও আইডি কিভাবে হেকড্ হলো এনিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। পরে রেজিস্ট্রার জেনারেল এর কার্যালয় থেকে বিষয়টির তদন্ত করা হয়।

রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ যাহিদ হোসেন বলেন, এই ঘটনায় আমরা তদন্ত করেছি। দায়ী ব্যক্তিদের আমরা চিহ্নিত করেছি। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরী করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।

রেজিস্ট্রার জেনারেল এর কার্যালয় থেকে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর পর স্থানীয় সরকার বিভাগ গত ২৪ এপ্রিল ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাসকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করেন প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মৌলভীবাজা জেলার রাজনগর উপজেলার ১নং ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (নিবন্ধক) নকুল চন্দ্র দাস অসৎ উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিবন্ধন করায় স্থানীয় সরকার আইন, ২০০৯- অনুযায়ী রেজিস্ট্রার জেনারেল, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুপারিশ করেন। যেহেতু ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগে তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে; সেহেতু ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে স্বীয় পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব এ কে এম আনিছুজ্জামান বলেন, আমরা রেজিস্ট্রার জেনারেল এর কাছ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর। ওই ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করি।

রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস বলেন, সার্ভার হ্যাক হয়ে ভুয়া নিবন্ধন করা হয়েছে। এসব নিবন্ধনে আমাদের স্বাক্ষর নেই। মন্ত্রণালয় থেকে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছি আমার জানা নেই।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, এই বিষয়ে একটি চিঠি এসেছে। আমি এখনো দেখিনি।


আরো সংবাদ পড়ুন...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর