চা বাগানের শ্রমিকদের অন্যতম ‘ফাগুয়া উৎসব’। এ উৎসব যেন বর্ণ-গোত্রের সীমানা ভেঙে সব সম্প্রদায়ের মানুষকে কাছে টেনে নেয়, যেন এক মিলনমেলা। বাংলাদেশের চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ থাকলেও, চা শ্রমিকদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। ভাষা ও সংস্কৃতিতে একেকটি চা বাগান এক একটি দেশের মতো। তবে ‘ফাগুয়া’ উৎসবে বাগানে সবাই একত্রিত হয়ে এক রঙের উৎসবে পরিণত করেন।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া চা বাগানে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায় ও সমাজের অন্যান্য অংশের নেতাদের একত্রিত করতে ফাগুয়া উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উৎসবের উদ্ভোধন করার কথা ছিল অন্তবর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা ও নির্মাতা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী। কিন্ত সমস্যা কারণে তিনি এই অনুষ্টানে উপস্থিত হতে পারেননি। তবে ভার্চুয়াল ভাবে বক্তব্য রাখেন তিনি। পরে এ উৎসবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ইসরাইল হোসেন।
অবহেলিত শ্রমিক জীবনে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য রক্ষায় শনিবার (১২ এপ্রিল) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ও ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে ও ফুলছড়া চা বাগানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই উৎসব চলে। উৎসবে বিভিন্ন সংস্কৃতির অন্তত ১৮টি পরিবেশনা ছিল। পত্রসওরা, নৃত্যযোগী, চড়াইয়া নৃত্য, ঝুমুর নৃত্য, লাঠিনৃত্য, হাড়িনৃত্য, পালানৃত্য, ডং ও নাগরে, ভজনা, মঙ্গলা নৃত্য, হোলিগীত, নিরহা ও করমগীত উপভোগ করে আগতরা।
ফাগুয়া উৎসবে উপস্থিত ছিলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন, ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদের আহবায়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ, সদস্য সচিব অনিল রায়, শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আমিনুল ইসলাম, বালিসিরা চা বাগানের জিএম মো. সালাহউদ্দিন, চা শ্রমিক নেতা পরিশল বারাইক প্রমুখ।
সড়জমিনে গেলে দেখা যায়, চা সম্প্রদায়ের ফাগুয়াকে আরও রঙিন করতে ফুলছড়া ফুটবল মাঠে ৫ম বারের মতো ফাগুয়া উৎসব আয়োজন করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ও ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদ। উৎসবের শুরুতেই আবিরের সঙ্গে রঙের খেলায় মেতে ওঠে নানা বয়সের হাজার হাজার নারী-পুরুষ। সবুজ চা বাগানের হৃদয় কিছুক্ষণের জন্য লাল হয়ে যায়। উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৩ হাজার দর্শক।
চা শ্রমিকরা জানান, ফাগুয়া ছিল চা বাগানের সবচেয়ে বড় উৎসব। এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে এবং তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় সহায়তা করবে।
উৎসব আয়োজক কমিটির আহব্বায়ক প্রীতম দাশ বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী চা বাগান রয়েছে। এই চা বাগানে রয়েছে সব চেয়ে বেশী চা জনগোষ্টীর বসবাস। তাঁদের রয়েছে নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি। চা শ্রমিকদের সংস্কৃতি ধরে রাখতে আমরা নানান সময়ে নানান অনুষ্ঠান করে থাকি। আর ফাগুয়া উৎসব যেহেতু তাদের বড় উৎসব তাই এই উৎসবকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলতে বড় করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চা জনগোষ্ঠীর শিল্পীরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘চা বাগানের সংস্কৃতি যেন কোনোভাবেই বিলুপ্ত না হয়, সেজন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ও ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদ আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ফাগুয়া উৎসব যেন সবসময় পালিত হয়, সেজন্য আমরা প্রত্যেকবার আয়োজকদের পাশে দাঁড়াই।