সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম :
কুলাউড়ায় ট্রাক বোঝাই আগর কাঠ আটক, বন আইনে মামলা সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জে পল্লী চিকিৎসকদের জমজমাট ব্যবসা শ্রীমঙ্গলে শিশুদের শেখার সুযোগ ও নারীদের জীবিকা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনা সভা কর্মধা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হেলাল আহমদ শ্রীমঙ্গলে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দুই জন আটক কমলগঞ্জে শাহজালাল মর্ণিং সান স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও পুরস্কার বিতরণ আগুনে পুড়ে সাংবাদিক কন্যার মৃত্যু আগামির বাংলাদেশ আমরা তরুণদের হাতে তুলে দেবো: আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান লাউয়াছড়া থেকে একরাতে ৩টি মূল্যবান সেগুন গাছ চুরি, চুরি হওয়া গাছের ১৬ টি খন্ডাংশ উদ্ধার

শ্রীমঙ্গলে আগাম জাতের আনারসের বাম্পার ফলন

সালাহউদ্দিন শুভ / ৮৭ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

পাহাড়ি উঁচু-নিচু টিলায় উৎপাদিত আনারস দেশখ্যাত। রসে টইটুম্বুর ও সুস্বাদু কারণে দেশের দূর দূরান্তে আনারসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সারা বছরই কমবেশি আনারস পৌঁছে যায়। চায়ের রাজ্যখ্যাত মৌলভীবাজারে চা-লেবুর পরেই রয়েছে আনারসের ব্যাপক চাষ। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া চাষের অনুকূলর থাকায় আগাম জাতের আনারসের ফলন বাম্পার হয়েছে শ্রীমঙ্গলে।

ন্যায্য দাম পেয়ে উপজেলার মোহাজিরাবাদ, বিষামণি, মাজদিহি, এমআর খান, নন্দরানী, বালিশিরা, নূরজাহান, ডলুছড়া, সাতগাঁও, হোসনাবাদসহ বিভিন্ন এলাকার আনারস চাষিদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। এদিকে হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে আনারস ব্যবসায়ীরা বরাবরের মতো লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন বলেও জানান বিভিন্ন এলাকার চাষিরা।

রবিবার (২৯ এপ্রিল) উপজেলার মোহাজিরাবাদ, বিষামনিসহ উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়-টিলায় গিয়ে দেখা যায়, টিলার বুকজুড়ে সাজানো-গোছানো অপরূপ দৃশ্যের বিশাল জায়গাজুড়ে আনারস বাগান। কাঁটাযুক্ত গাঢ় সবুজের পাতায় পাতায় ডানা মেলেছে শত শত কাঁচা-পাকা আনারস।

ভোর বেলা দেখা যায়, বিভিন্ন বাগান থেকে শতশত ঠেলাগাড়ি ও জিপ যোগে আনারস নিয়ে শ্রীমঙ্গল শহরে আসার মনোরম দৃশ্য। ঠেলাগাড়ির সামনের দিক মাটিতে মুখ দিয়ে তার পিঠে রাখা আনারসকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে ছোট-বড় আড়ৎদার ও পাইকারি-খুচরা ক্রেতারা এগুলো দেখে সহজে আকৃষ্ট হন। গাড়ি অনুপাতে একেকটা ঠেলাগাড়িতে ২০০ থেকে ৫০০ পিস আনারস সাজিয় রাখা হয়। সাইজ অনুযায়ি প্রতি পিস আনারস বড় ৬০ থেকে ৪০ টাকা, মাঝারি ৩০ থেকে ২০ টাকা, ছোট সাইজের আনারস ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।

উপজেলার বিভিন্ন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, গরমের কারণে রসালো ফল আনারসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলের আড়তজুড়ে প্রায় কোটি টাকার আনারস কেনাবেচা হয়েছে।

তারা বলেন, বাজারে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার আনারস বেচাকেনা হয়। তবে অসময়ে আগাম জাতের এ আনারস চাষে চাষিদের শুরুতে চরম বেগ পোহাতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে সেচ সংকট মোকাবিলা ও অধিক দামে একাধিকবার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়েছে বলেও চাষিরা জানান।

উপজেলার মোহাজিরাবাদ এলাকার চাষি মো. ইউনুস খান বলেন, ‘প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও আমি আনারস চাষ করেছি। উৎপাদনের এ মৌসুমে আগাম জাতের আনারসের ভালো ফলন হয়েছে। বড় আনারস প্রতি পিস ৫০-৬০ টাকায় এবং ছোট আনারস ২০-৪০ টাকায় বিক্রি করেছি। ন্যায্য দামে আনারস বিক্রি করে লাভবান হয়েছি।’

উপজেলার বিষামণি এলাকার আনারস বাগান মালিক বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘এবার আমার বাগানে আনারসের ফলন ভালো হওয়ায় একটু আগেই আনারসগুলো উত্তোলন করে বিক্রি করা শুরু করেছি। কিন্তু যখন আনারস একসঙ্গে পাকতে শুরু করে তখন সংরক্ষণের অভাবে অনেক আনারস পঁচে নষ্ট হয়ে যায়।’

চাষি সামছুল হক জানান, ‘আনারসের ভালো ফলন হয়েছে। তিনি এ বছর তিন থেকে চারটি টিলায় আনারস চাষ করে ২০-২৫ লাখ টাকার আনারস বিক্রি করেছেন।’

বেগুনবাড়ী এলাকার আনারস বাগান মালিক ইরেশ পাল জানান, ‘আগাম বৃষ্টি হওয়াতে এবার আনারসের ফলন খুব ভালো হয়েছে। বৃষ্টির পানি পাওয়ায় আনারসের ফলন ভালো হওয়াতে আমরা চাষিরা অনেক খুশি। তবে আনারস সংরক্ষণের জন্য একটি হিমাগারের খুব প্রয়োজন।’

শ্রীমঙ্গল নতুন বাজার আড়ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. আবু তাহের আগাম জাত আনারসের উৎপাদন খরচ বেশি জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের আড়তে কম হলেও প্রায় কোটি টাকার আনারস কেনাবেচা হয়েছে। এতে আড়তদাররা যেমন খুশি, তেমনি চাষিরাও ভালো দাম পেয়ে খুশি। মৌসুমে আরও কোটি টাকার বেচাকেনা হতে পারে বলে আশা করছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ‘মে থেকে জুন পর্যন্ত আনারসের ভরা মৌসুম। তবে আগাম আনারস চাষে খরচ বেশি হলেও লোকসানের ভয় থাকে না। এ বছর মৌলভীবাজার জেলার প্রায় ১ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ২০ হাজার ৬শত টন। এ অঞ্চলে জলডুবি, হানিকুইন ও জাইনকিউ নামের আনারসের উৎপাদন হয়ে আসছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উজ্জ্বল সূত্রধর বলেন, ‘অনেক কৃষক আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন যে, আনারস পঁচে নষ্ট হয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আনারস সংরক্ষণের জন্য শ্রীমঙ্গলে একটি হিমাগার স্থাপন জরুরি। কৃষকদের আমরা বলেছি, শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি শ্রীমঙ্গলে একটি হিমাগার স্থাপনের জন্য। শ্রীমঙ্গলে এবার হানি কুইন ও জায়ান্ট কিউ দুই ধরনের আনারসের চাষ বেশি রয়েছে। আনারসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চাষিদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ কৃষি অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘মৌলভীবাজারের উৎপাদিত আনারস শিগগিরই বিদেশে রফতানির বিষয়ে সরকার একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে চাষিরা আরও লাভাবান হবেন।’


আরো সংবাদ পড়ুন...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর