শেষ হয়েছে ২৮তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)। এবারের মেলায় অংশ নেওয়া দেশি-বিদেশি প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলোতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে যা গত বছরের বিক্রির থেকে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। এ তথ্য দিয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো। একই সঙ্গে এবারের বাণিজ্য মেলায় প্রায় ৩৫ দশমিক ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩৯১ দশমিক ৮২ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে। এটিও গত বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ- চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা- ২০২৪ সমাপনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মাধ্যমে ২১ জানুয়ারি থেকে এ মেলা শুরু হয়েছিল। মেলার শেষদিন উপলক্ষে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী বছর বাণিজ্য মেলা দ্বিতল করা হবে। প্যাভিলিয়ন স্টলের পাশাপাশি অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন করা হবে। সেমিনারে বিদেশি বায়ার ও রাষ্ট্রদূতদের সম্পৃক্ত করে রপ্তানিমুখী পণ্যের পরিধি বাড়ানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের প্রতিটি গ্রামে একটি করে পণ্য উৎপাদন করা হবে। একটি গ্রাম একটি পণ্য কার্যক্রম শুরু করব আমরা। দেশের প্রতিটি গ্রামে প্রতিটি ঘরে উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’
বক্তব্য শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু) আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার সমাপনী ঘোষণা করেন।
মেলার শেষ দিনে বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়নে বিভিন্ন অফার চললেও ক্রেতাদের চাপ তুলনামূলক অনেক কম লক্ষ্য করা গেছে। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ছিল, শেষ দিনে সকাল থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় থাকবে। তবে তার বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা গেছে মেলা প্রাঙ্গণে।
এবার মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন, রেস্টুরেন্ট ও স্টলে বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্সস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসজ্জা ও গৃহস্থালি সামগ্রী, চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারি, ওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য ইত্যাদি নানাবিধ পণ্য প্রদর্শন করা হয়েছে- যা দেশের আমদানি ও রপ্তানি পরিধিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে বাণিজ্য মেলা আয়োজিত হয়ে আসছে।
ইপিবির (রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো) পক্ষ থেকে জানানো হয়, মেলায় মোট ৩০৪টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ৫টি দেশের ৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। দেশগুলো হলো- ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুর। এবারের বাণিজ্যমেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ছিল ৩৫১টি; যা বিগত বছরে ছিল ৩৩১টি। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩০০ বর্গফুট আয়তনের দুইটি হলে (এ ও বি) ১৭৪টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
সেন্টারের প্রধান ফটকের পূর্বপাশে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নসহ প্রিমিয়ার ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির স্টল ছিল ৬২টি। হলের পেছনে ফরেইন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন এবং প্রিমিয়ার ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নসহ প্রিমিয়ার ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির স্টল ছিল ৫৩টি।