শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম :

এন্ডোসকপি করাতে গিয়ে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

প্রতিদিনের মৌলভীবাজার ডেস্ক:: / ৬৮ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

রাজধানীর ল্যাব-এইড হাসপাতালে এন্ডোসকপি করাতে গিয়ে চিকিৎসকের অবহেলায় রাহিদ রেজা (৩১) নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রোগীর পরিবারের দাবি, চিকিৎসক রোগীর সব রিপোর্ট না দেখেই জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করেছেন। এতে রোগীর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে।

জানা যায়, রোগী রাহিদ রেজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেপাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তার অধীনেই রোগী এন্ডোসকপি করা হয়। পরে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে তাকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাত আড়াইটার দিকে ল্যাব-এইডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে তার মৃত্যু হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট অবস্থায় রোগীকে পেয়েছে। যথাসাধ্য চেষ্টা করার পরেও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, রাহিদ রেজা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়াসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। তারা কোনো রিপোর্টই স্বাভাবিক ছিল না। অধ্যাপক স্বপ্নীল তার রিপোর্ট ভালোভাবে না দেখেই তাকে এন্ডোসকপি করাতে বলেন। সেখানে তাকে জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়। এন্ডোসকপি করার পর তাকে পর্যাপ্ত সময় অবজারভেশনে না রেখেই বেডে দিয়ে দেওয়া হয়। পরে তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোগীর স্বজন ফারহান ইসলাম বলেন, রাহিদ রেজা ল্যাবএইড হাসপাতালের ধানমন্ডি শাখায় অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের তত্ত্বাবধানে এন্ডোসকপি করাতে গিয়েছিলেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টার সময় এন্ডোসকপি করাতে হাসাপাতালে যান তিনি। তবে অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব দেরিতে আসায় রাত আনুমানিক ১০টার পর তাকে এন্ডোসকপি করানোর জন্য নেওয়া হয়। কিন্তু তার অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ছিল। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে করানো পরীক্ষা অনুযায়ী তার প্রায় সব রিপোর্টই অস্বাভাবিক ছিল। পরবর্তীতে কথা বলে চিকিৎসদের বক্তব্য অনুযায়ী তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করলেও অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া অবস্থায় ছিলেন না তিনি।

তিনি আরও বলেন, এন্ডোসকপি জন্য চিকিৎসক তার রিপোর্টগুলো ভালো করে দেখেননি। তারা তাকে জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে ছিলেন। এরপর তার এন্ডোসকপিও করা হয়। ওখানে রোগীদের অনেক চাপ ছিল ফলে সঠিক প্রটোকল পালন করা হয়নি বলে আমাদের বিশ্বাস। তারা এন্ডোসকপির পর তাকে মনিটরিং না করে বেডে দিয়ে দিয়েছিলেন। অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগের পর রাত সোয়া ১১টায় তার এন্ডোসকপি করা হয়। বেডে দেওয়ার পর সেখানে প্রায় ঘণ্টাখানেক তাকে রেখে দেওয়া হয়। কারণ তার জ্ঞান ফিরছিল না। সেখানেই তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। পরে তাকে সাতবার সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) দেওয়া হলে তিনি রিভাইভ করেন। এরপর সঙ্গে সঙ্গে তাকে ল্যাব-এইডের আইসিইউতে নেওয়া হয়। তখন আনুমানিক রাত দুইটা বাজে। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ওইদিন রাত থেকে তিনি আইসিইউতে ছিলেন। আজ সকালে চিকিৎসকরা তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এসময় হাসপাতালের বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালে ঠিক কত বিল এসেছে তা আমার জানা নেই। আর ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে আমাদের জন্য চিকিৎসকের বিষয়টি ওপেন করে দিয়েছিল। তাদের ভাষ্য ছিল, আপনারা আপনাদের পছন্দমতো যাকে ইচ্ছা নিয়ে আসেন। ফলে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আমাদের নিজস্ব ছিলেন।

অভিযোগ ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব তার অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। যে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করেছিল তার বিষয়ে আমরা এখনো কোনো কিছু জানি না। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে ওই চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী মনে করা হচ্ছে। মামলাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ল্যাব-এইড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা চৌধুরী মেহের-এ-খোদা বলেন, আমরা রোগীকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর পেয়েছি। এন্ডোসকপি করানোর পর রোগীর কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়। এন্ডোসকপির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। যে অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট অ্যানেস্থেসিয়া দিয়েছেন তিনি ওই রোগীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক। তিনি হাসপাতালের কেউ নন।

ল্যাবএইডে চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর আমরা তাকে পেয়েছি। এরপর সরাসরি তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তখনই রোগী ভেন্টিলেশনে চলে গেছেন। আমরা আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন দিয়েছি। আমরা ৭২ ঘণ্টা চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তিনি মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার দিনগত রাত আনুমানিক আড়াইটা-তিনটার দিকে তাকে পেয়েছি। শনিবার ছয় সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছিলাম। সেখানে একজন করে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট, পালমোনোলজিস্ট, নেফ্রোলজিস্ট, নিউরোলজিস্ট এবং আইসিইউর চিকিৎসক ছিলেন। এ ছয়জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন। তারা রোগীর পরিবারকে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি জানিয়েছেন। এরপর আজ সকালে রোগী মারা গেছেন।

বিল ও অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোগীর পরিবার আমাদের কাছে লিখিত বা মৌখিক কোনো অভিযোগ করেননি। তারা মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময়ও বলেছেন, হাসপাতালের ওপর তাদের ক্ষোভ নেই। তারা হাসপাতালের সেবায় সন্তুষ্ট। তারা সম্পূর্ণ বিল দিয়ে যাননি। আমরাও তাদের কোনো চাপ দিইনি। কারণ, আমরা তাকে যে অবস্থায় পেয়েছিলাম তার কোনো উন্নতি আমাদের এখানে থাকাকালীন হয়নি। আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করেছি।


আরো সংবাদ পড়ুন...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর