দলবেঁধে ফুটেছে কচুরিপানা ফুল। বেড়ে ওঠে অযত্নে। আবার এই কচুরিপানা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে মনজুড়ায় মানুষের। এ ফুল দেখতে সবুজের মধ্যে সাদা, হালকা গোলাপি আর বেগুনি রঙের। কচুরিপানা ফুলের শুভ্রতায় মুগ্ধ হচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। এ ফুলের নান্দনিক রূপ দূর থেকেই ভেসে আসে চোখে। ছোট ছোট বদ্ধ জলাশয়ে ফোটা কচুরিপানা ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হন অনেকেই। ফুলের নির্মল ও স্নিগ্ধকর সৌন্দর্য প্রকৃতিতে যোগ করেছে নান্দনিকতা। তাই প্রকৃতি মেতেছে এখন নতুন রূপে।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে এমন অপরূপ দৃশ্য তৈরি হয়েছে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের ভিতরে পরিত্যক্ত জলাশয়ে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের খাল, বিল, পুকুর ও ডোবাসহ জলাশয়গুলোতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কচুরিপানার ফুল।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কচুরিপানা ফুলের চাদরে ঢেকে আছে খাল, বিল, পুকুর, ডোবা ও জলাশয়। এসব স্থানের যেখানেই দৃষ্টি যাচ্ছে- শুধু ফুল আর ফুল। ফুলের মুগ্ধতা ছড়ানো সৌন্দর্য উপভোগ করেন প্রকৃতি প্রেমীরা। অনেকে আবার পরম যত্নে নিজের স্মার্টফোনে তুলছেন ফুলের ছবি। অযত্নে বেড়ে উঠেও যে মুগ্ধতা ছড়ানো যায়, তার যেন এক অনন্য উদাহরণ এই কচুরিপানা ফুল।
কৃষিক্ষেত্রে এর যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে। কৃষকেরা কচুরিপানা উঠিয়ে জমিতে ফলানো আলু, পটলসহ বিভিন্ন সবজি চাষে ব্যবহার করছেন। কচুরিপানা থেকে এখন তৈরি হচ্ছে জৈব সার। ফলে কৃষক ফসল উৎপাদনে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। কচুরিপানা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন-খাল, বিল, পুকুর, ডোবাসহ বিভিন্ন বদ্ধ জলাশয়ে এ সময় পানি শুকিয়ে যায়। তাই অল্প পানিতে ব্যাপক হারে জন্মেছে কচুরিপানা। এসব কচুরিপানা এখন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে।
উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘স্কুলে আসতে-যেতে স্কুলের পাশে পুকুরের মধ্যে ফুটে থাকা কচুরিপানা ফুল দেখতে পাই। এগুলো দেখতে অনেক ভালো লাগে। মাঝে মধ্যে কিছু ফুল ছিঁড়ে খেলা করি, আবার বাড়িতেও নিয়ে যাই, বন্ধুদেরও উপহার দেই।’
কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব এর আহব্বায়ক এম এ ওয়াহিদ রুলু বলেন, ‘কচুরিপানা নিজ থেকেই জন্মায়। যখন বদ্ধ জলাশয়গুলোতে পানি কম থাকে তখন ফুল ফোটে, যা দেখতে অনেক সুন্দর। এতে মুহূর্তেই আকর্ষিত হয় মানুষের মন। কম-বেশি অনেকেই এ ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আসলে খুবই সুন্দর লাগছে ফুলগুলো।আলাদা করে কোনো যন্ত্র বা দেখাশুনা করা লাগেনা এই ফুলগুলো। আমাদের উপজেলা পরিষদের আলাদা একটা সুন্দর্য নিয়ে এসেছে এই কচুরিপানার ফুল। কবির ভাষায় ইউএনও বলেন, দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’- সত্যিকার অর্থে যে অবহেলিত উদ্ভিদে এত টানা-টানি মনোমুগ্ধকর ফুল বিস্তৃত রয়েছে, তা প্রকৃতিপ্রেমীদের বিমুগ্ধ কোরে না পারে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, ‘কচুরিপানা কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সঠিকভাবে এসব কচুরিপানা সংরক্ষণ করা হলে জৈব সার তৈরি করা যায়। এতে কৃষকরা ভালো ফলন পাওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হতে পারেন। এজন্য কচুরিপানাকে কাজে লাগানোর জন্য আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।
কচুরিপানা ফুলের সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ্য করে কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, বর্তমানে কমলগঞ্জ উপজেলার খাল, বিল, পুকুর, ডোবাসহ বিভিন্ন বদ্ধ জলাশয়ে দেখা যাচ্ছে কচুরিপানাগুলোতে ফুল ফুটেছে। যা দেখে অনেকে বিমোহিত হচ্ছেন। কচুরিপানা ফুল দেখতে খুব সুন্দর। এ ফুল জলাশয়ে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণই মুগ্ধতা ছড়ায়।’