সিলেট-আখাউড়া রেলপথের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া বনাঞ্চল এলাকায় ট্রেন আটকা পড়াটা এখন রীতিমতো স্বাভাবিক এক ঘটনা। সিলেট থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম যাওয়া-আসা করা বিভিন্ন ট্রেন লাউয়াছড়া বনের ভেতরে পাহাড়ি উঁচু এলাকায় অতিক্রমের সময় এ সমস্যায় পড়ে।
আটকা পড়া ট্রেন কখনো পেছন দিকে ভানুগাছ রেলস্টেশনে নিয়ে আসা হয়। আবার কখনো হুইল স্লিপ বা চাকা ঘোরানোর মাধ্যমে উঁচু এলাকায় ওঠাতে হয়। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা।
সাধারণ নিয়মিত যাত্রীরা বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জেনেশুনে এই সমস্যা সমাধান করেনা। বাংলাদেশর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ট্রেন মনে হয় আটকা পরে এই জায়গায়। যাত্রীবাহী ট্রেন গুলোতে দূর্বল ইঞ্জিন না লাগিয়ে ভালো ইঞ্জিন লাগালেই এই সমস্যা সমাধান হবে।
ট্রেনের এই সমস্যার বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহা পরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, লাউয়াছড়া বনাঞ্চল এলাকাটা উঁচু থাকায় ও একইসাথে রেললাইনের ওপর গাছের পাতা পড়ার কারনে চাকা স্লিপ করে। এ জন্য মাঝে মধ্যে ট্রেন আটকা পরে। এছাড়া বৃষ্টি বা কুয়াশার কারণেও চাকা স্লিপ করে এমন হয়। তিনি আরও বলেন, এই সমস্য দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী অধিদপ্তরকে জানানো হবে। এই লাইনে প্রয়োজন হলে নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সপ্তাহে কমপক্ষে তিনদিন সিলেট- ঢাকা রেলপথের উপবন এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, মালবাহী ট্রেন ও সিলেট – চট্রগ্রাম রেলপথের পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেস লাউয়াছড়া বনে আটকা পরে। এসব ট্রেনের ইঞ্জিন দূর্বল হওয়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়তো। আটকা পড়া ট্রেন কখনো পিছন দিকে ভানুগাছ রেলস্টেশনে নিয়ে আসা হয় আবার কখনও ধাক্কা দিয়ে উঁচু এলাকায় উঠতে হয়। এতে বনের ভেতর ট্রেন আটকা থাকতে হয়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায় গত ২২ মার্চ রাত তিনটার সময় সিলেট গামী উপবন এক্সপ্রেস লাউয়াছড়া বনে আটকা পরে। পরে প্রায় ১ ঘন্টা ট্রেন ধাক্কা দেওয়ার পর ট্রেনের ইঞ্জিন চালু হয় ৪টায়। ফলে নির্ধারিত সময়ে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি অনেকেই। রমজান মাস থাকায় অনেকেই সেহরির খাবার খেতে পারেননি। এর আগে গত ১৯ মার্চ পারাবত এক্সপ্রেস বনের ভেতর ১ ঘন্টা আটকা পরে। ১৮ মার্চ ঢাকা গামী আরও একটি ট্রেন আটকা পরে। এর আগে একই কারণে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস পেছনের দিকে চালিয়ে ভানুগাছ রেলস্টেশনে আনা হয়।
ঢাকা থেকে শমশেরনগর রেলস্টেশনে আসা যাত্রী সালাম সিকদার, বাবর আহমেদ, ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা ব্যবসা করি এ জন্য সপ্তাহে দুই তিন বার ঢাকা যেতে হয়। গত কয়েকমাস ধরে লাউয়াছড়া বনে ট্রেন আটকার ঘটনা অনেক বেড়ে গেছ। গেল একসপ্তাহে তিন বার আটকা পরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। দূর্বল ইঞ্জিন থাকার কারণে বনের উঁচু জায়গা ট্রেন উঠতে পারেনা। ভানুগাছ স্টেশন থেকে শ্রিমঙ্গল স্টেশন যেতে দেড় ঘন্টা সময় লেগে যায়। সবশেষ গত ২২ মার্চ ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা উপবন এক্সপ্রেস বনের মধ্যে আটকা পরে ১ ঘন্টা। পরে অনেক যাত্রীরাও ট্রেনকে ধাক্কা দিয়ে ইঞ্জিন চালু করতে সহযোগিতা করেছেন। দ্রুত সময়ে এই সমস্যা সমাধান করার দাবি জানান তারা।
ভানুগাছ রেলস্টেশনে মাস্টার কবির আহমদ বলেন, লাউয়াছড়া বনে ট্রেন আটকার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অনেক সময় দূর্বল ইঞ্জিনের কারণে বনের উঁচু জায়গা উঠতে পারেনা। আবার কখনও বৃষ্টির কারণে চাকা স্লিপ করে থাকে। এতে করে যাত্রীরা অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানানো উচিত। তবে এসব ট্রেনের ইঞ্জিন সমতল জায়গায় কোন সমস্যা করেনা।