বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১০:০৪ অপরাহ্ন

শুভ বড়দিন আজ

অনলাইন ডেস্ক / ৬২ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

আজ ২৫ ডিসেম্বর, শুভ বড়দিন, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। সারা বিশ্বের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষদের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টধর্মের মানুষেরাও ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা ও আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে দিনটি উদ্‌যাপন করবেন।

খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট এই দিনে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বেথলেহেম শহরের এক গোয়ালঘরে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানব জাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করার জন্য যিশুখ্রিষ্ট জন্ম নিয়েছিলেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে ‘শুভ বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীরাও এ দিন যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আচারাদি, আনন্দ-উৎসব এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুভ বড়দিন উদযাপন করবেন।

এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জাগুলোকে সাজানো হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন গির্জা এবং তারকা হেটেলগুলোতে ব্যবস্থা করা হয়েছে আলোকসজ্জার।

রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতে আলোকসজ্জার পাশাপাশি হোটেলের ভেতরে কৃত্রিমভাবে স্থাপন করা হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি ও শান্তাক্লজ। বড়দিনের প্রাক্কালে মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন গির্জায় বিশেষ প্রার্থনাও অনুষ্ঠিত হয়। আর আজ সকাল থেকে শুরু হবে বড়দিনের প্রার্থনা। বড়দিন উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।

এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীসহ সবার শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘পথভ্রষ্ট মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে আহ্বান জানাতে গিয়ে তাকে (যিশুখ্রিষ্ট) অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। তবুও তিনি মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, সেবা, ক্ষমা, মমত্ববোধ, সহানুভূতি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠাসহ শান্তিপূর্ণ অবস্থানের শিক্ষা প্রচার করে গেছেন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য স্থাপনসহ বর্তমান যুদ্ধ-বিগ্রহপূর্ণ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যিশুখ্রিষ্টের শিক্ষা ও আদর্শ ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে বলে আমি মনে করি।’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সব ধর্মের মূল কথাই হচ্ছে মানুষের সেবা ও কল্যাণ। তাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকে এ দেশে সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানাদি স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে। একটি বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও মজবুত করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, ‘পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল যিশুখ্রিষ্টের অন্যতম ব্রত। মহামতি যিশু বিপন্ন ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। তার জীবনাচরণ ও দৃঢ় চারিত্রিক গুণাবলির জন্য তিনি মানব ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে এ দেশে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করছে। এখানে রয়েছে সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের নিজস্ব ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা। বড়দিন দেশের খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিরাজমান সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে আমি আশা করি।’

নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই: সিটিটিসি

বড়দিন উপলক্ষে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মো. মাসুদ করিম। তিনি বলেন, এবার নির্বিঘ্নে ও আনন্দঘন পরিবেশে বড়দিন উদযাপিত হবে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কাকরাইলে সেন্ট মেরি ক্যাথেড্রাল চার্চে বড়দিন উপলক্ষে নিরাপত্তা মহড়া শেষে এ কথা বলেন তিনি।

মাসুদ করিম বলেন, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শুভ বড়দিন। এ উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রয়োজনীয় সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। নগরীর প্রতিটি চার্চে সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া এই উৎসবকে ঘিরে সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, কে-নাইন, রোবট টিমসহ স্পেশালাইজড ইউনিটগুলো দায়িত্ব পালন করবে। বর্তমানে সেনাবাহিনী পুলিশের সঙ্গে আছে। তারাও মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।

বড়দিন উপলক্ষে নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই, আমরা অত্যন্ত সতর্ক আছি। প্রতিবারের মতো এবারও বড়দিন নির্বিঘ্নে ও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হবে।

এর আগে সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল চার্চে সিটিটিসির বিশেষায়িত সোয়াট টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, কে-নাইন, রোবট নিয়ে নিরাপত্তা মহড়া দেওয়া হয়। এ ইউনিটগুলো নিরাপত্তা দিতে সার্বক্ষণিক (স্ট্যান্ডবাই) প্রস্তুত থাকবে।

এ সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সকলের সহযোগিতায় উৎসবমুখর পরিবেশে বড় দিন উদযাপনের আশা প্রকাশ করেন সেন্ট মেরি ক্যাথেড্রালের আর্চ বিশ্ব এন ডি ক্রুজ। এ সময় ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল চার্চের ফাদার উপস্থিত ছিলেন।

আতশবাজি-ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ

এদিকে বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীতে আতশবাজি, পটকা ফোটানো এবং ফানুস ওড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ২৫ ডিসেম্বর খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুভ বড়দিন উদযাপিত হবে। এই অনুষ্ঠান ভাবগম্ভীর ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-III/৭৬) এর ২৮ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে ২৪ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ২৫ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফুটানো এবং ফানুস উড়ানো নিষিদ্ধ করা হলো।

পবিত্র বড়দিন অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও নিরাপদে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ডিএমপি নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছে।


আরো সংবাদ পড়ুন...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর