বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কমলগরঞ্জর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেল গেইটের পাশে ঘটনাটি ঘটে। নিহত সাম্য স্থানীয় ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। নিহত সাম্য দে এর পৈত্রিক বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের বাসুদেবশ্রী গ্রামে। মায়ের চাকরির সুবাধে তারা স্ব-পরিবারে দীর্ঘদিন যাবত শ্রীমঙ্গল শহরে বসবাস করছেন।
নিহত সাম্য দে এর বন্ধু ফারহান আলম বলেন, ‘আমরা ২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার্থী পাঁচ বন্ধু বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করি। বনে আমরা ঘুরাফেরার পর ছবি তোলার জন্য রেল ক্রসিংয়ের সামনে যাই। সেখানে ছবি তোলা শেষ করে ব্যাগ কাধে নিয়ে শহরের দিকে ফেরার প্রস্তুতি নেবার সময় হঠাৎ করে মোড়ে ট্রেনের ইঞ্জিন দেখতে পেয়ে আমরা চারজন দৌড় দিয়ে সাইডে চলে যাই। আমি লাফ দিয়ে পরে যাই রেল লাইনের বাইরে। ট্রেনের ইঞ্জিন আমাদের পাশ দিয়ে যাবার সময় একটি আওয়াজ শুনতে পাই। পরে আমি ওঠে সামনে গিয়ে দেখি অনেক লোকজন জড়ো হইছে। গিয়ে দেখি সাম্য রেল লাইনের পাশে মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সাথে সাথেই তাকে নিয়ে আমরা হাসপাতালে চলে আসি। কিন্তু তাকে বাঁচাতে পারলাম না।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আজকে (বৃহস্পতিবার) দুপুর ঠিক ১টা ৫ মিনিটের দিকে একজনকে মুমুর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর আমাদের ডিউটিরত চিকিৎসক দেবাশীষ দত্ত তাকে পরীক্ষা করে দেখেন তার পালস্, পিপি কোন কিছু রেকর্ড ছিল না। মানে তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে খবর নিয়ে জানলাম সে লাউয়াছড়া বনাঞ্চলে রেল এক্সিডেন্ট করলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হয়তো সে ঘটনাস্থলেই অথবা হাসপাতালে আনার পথে মৃত্যুবরণ করেছে।’
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হলে আখাউড়া থেকে একটি নাইট ইঞ্জিন যার নম্বর ২৬১৫ সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। দুপুরে খবর আসে লাউয়াছড়া বনে একজন ওই ইঞ্জিনের ধাক্কায় আহত হয়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘১৯ ডিসেম্বর বেলা অনুমান ১২টা ২০ মিনিটের দিকে আখাউড়া থেকে সিলেটগামী একটি ইঞ্জিনের ধাক্কায় আমাদের রেলওয়ে থানার আওতাধীন লাউয়াছড়া এলাকায় শিক্ষার্থী সাম্য দে মারা যান। লাউয়াছড়ায় ৫ জন শিক্ষার্থী ঘুরতে আসছিলেন। পরে সাম্য দে’কে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। উক্ত বিষয়ে আমরা সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছি এবং একটি ইউডি মামলা দায়ের করেছি। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’