মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে আদিবাসী খাসি (খাসিয়া) সম্প্রদায়ের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ অনুষ্ঠান এবার হচ্ছে না। খাসিদের আয়ের ও জীবিকার প্রধান উৎস পান চাষ চলতি মৌসুমে পানের ব্যবসা মন্দার কারণে ও আর্থিক সংকট থাকায় চলতি মৌসুমে “খাসি সেং কুটস্নেম ” অনুষ্ঠান হবে না বলে জানিয়েছে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল।
জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর ২৩ নভেম্বর কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সম্প্রদায়ের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠানটি করে আসছে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল।খাসিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সাজসজ্জায় সেজে নেচে–গেয়ে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন। সেং কুটস্নেম উৎসবের দিন সবাই মিলে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে আনন্দে নিজেদের সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করেন। অনুষ্ঠানস্থলে পুরো মাঠ জুড়ে মেলা বসে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়ারা পোশাক,পান, তীর, ধনুক, বাঁশ-বেতের তৈরী জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন। এই উৎসবে সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ এসে অংশ নেন। দেশ–বিদেশের পর্যটকেরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন। খাসিদের সম্পন্ন নিজস্ব অর্থায়নে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল উৎসবের আয়োজন করে।চলতি মৌসুমে খাসিদের আয়ের ও জীবিকার প্রধান উৎস পান চাষের ব্যবসা মন্দার কারণে ও বিভিন্ন ভাবে আর্থিক সংকট থাকায় এবার কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছেনা। তবে সল্প পরিসরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
খাসিরা জানান, আমরা প্রতি বছর আমাদের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠানটি করে আসছি। তবে এবার অর্থের অভাবে অনুষ্ঠানটি করা যাচ্ছেনা। আমাদের খাসি সম্প্রদায়ের সবাই এই অনুষ্ঠানটির জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু এবার “খাসি সেং কুটস্নেম” না-হওয়ার কারণে আমাদের পরিবারের সদস্যরা কষ্ট অনুভব করছে।
এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার হিরামতি খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান বিঅয়ানলি বলেন, ‘ছেলে মেয়েরা কত আশা নিয়ে বসে থাকে বছরের এই দিনেটা আসবে সেই অপেক্ষায় থাকে।কিন্তু আমাদের পানের ব্যবসা ও আর্থীক সংকটের কারণে এটা হচ্ছেনা। খুব খারাপ লাগছে বিষয়টা,তারপরেও মনে নিতে হবে।’
এ বিষয়ে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক, ফিলা পতমী বলেন, খাসিদের আয়ের ও জীবিকার প্রধান উৎস পান চাষ।পানের ব্যবসায় এবার মন্দা চলছে।খাসিরা পানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না।এই কারণে অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা।এই অনুষ্ঠান করতে তাদের দুই লক্ষ টাকারও অধিক খরচ হয়।এই টাকা জোগাড় করতে না পারার কারণে এ বছর তাঁরা অনুষ্ঠান করতে পারছেন না।তবে ঘরোয়া সীমিত পরিসরে দিনটির তাৎপর্য ও এর ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা সভার মাধ্যমে দিনটিকে পালন করা হবে।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন, সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ এই উৎসবে এসে অংশ নেন। দেশ–বিদেশের পর্যটকেরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন। খাসি সেং কুটস্নেম বা বর্ষ বিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব। তবে এবার এ উৎসবের আয়োজন হবে না।