মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আধুনিক চাষাবাদ মালচিং পদ্ধতিতে আগাম টমেটো চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করে বাজিমাত করেছেন কৃষক আব্দুল মান্নান৷ তার অভাবনীয় সাফল্যে অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। এই পদ্ধতির চাষাবাদে জমি রোগ-বালাই থেকে মুক্ত থাকে। এতে পানি, সার, ওষুধ খরচ সাশ্রয়ী হয়, পাশাপাশি ফলন হয় বেশি এবং গাছ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে।
কৃষি বিভাগ জানায়, জমিকে উত্তমরূপে তৈরি করে প্রয়োজনীয় জৈব ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে বেড তৈরি করে সেখানে বীজ বপন করতে হয়। তারপর সে বেডগুলো মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। মালচিং পেপার হলো বিশেষ ধরনের পলিপেপার (পলিথিন)। বীজগুলো থেকে চারা গজানোর পর চারার স্থানগুলো থেকে মালচিং পেপার ছিঁড়ে দিতে হয়। যাতে করে চারাগুলো মাথা তুলে বড় হতে পারে। এই মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে না। সেচের অতিরিক্ত পানি জমে জমি বিনষ্ট হয় না। অতিরিক্ত সারের প্রয়োজন হয় না। ফলে জমি চাষাবাদে শ্রম কমে যাওয়ায় শ্রমিক কম লাগে। উৎপাদন খরচ কমে যায়। জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলন অনেক বেশি হয়। গাছের আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এতে করে কৃষক সবদিক থেকে লাভবান হয়।
জানা যায়, মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শুকুর উল্লার গ্রামের তরুণ কৃষক আব্দুল মান্নান এবছর ১০ বিঘা জমিতে আগাম টমেটো আবাদ করেছেন। এবার তার উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৪ থেকে ১৫ লাখের ওপরে৷ বর্তমান বাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। ফলন ভালো হওয়ায় ও বাজারদর গত বছরের তুলনায় বেশি হওয়ায় এবার প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কৃষক আব্দুল মান্নান গত বছর ৬ বিঘা জমিতে আগাম জাতের টমেটোর আবাদ করেন। তাঁর উৎপাদন খরচ হয় ১৫ লাখ। খরচ বাদে তাঁর লাভ হয় আরো ২০ লাখ টাকা। নতুন এই পদ্ধতিতে আগাম টমেটো চাষ করে কৃষক আব্দুল মান্নানের ব্যাপক সাফল্যে ও অধিক লাভবান হওয়ায় ইতোমধ্যে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলে, প্রতিবছর তাঁকে দেখে উৎসাহিত হয়ে গ্রামে আরও ২০-৩০ জন কৃষক ৫০ বিঘা জায়গায় টমেটোর আবাদ করেছেন। তাঁরাও সাফল্য পেয়েছেন।
এদিকে তার চাষাবাদ টমেটো ক্ষেতে প্রতিদিন অনেক কৃষক এসে খোঁজ-খবর ও পরামর্শ নিচ্ছেন। তাঁরাও আগামীতে এই পদ্ধতিতে আগাম টমেটোর আবাদ ব্যাপকভাবে করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, ‘মালচিং পদ্ধতিতে খরচ কমেছে কয়েকগুণ অপরদিকে অসময়ে টমেটো চাষ করে বাড়তি আয় এর সুযোগ হয়েছে। খরচ বাঁচাতে এবং উৎপাদন বাড়াতে মালচিং পদ্ধতিতে টমোটো চাষ করেছি। তাছাড়া মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে না। সেচের অতিরিক্ত পানি জমে চারা বিনষ্ট হয় না। অতিরিক্ত সারের প্রয়োজন হয় না। ফলে জমি চাষাবাদে শ্রম কমে যাওয়ায় কৃষি শ্রমিক কম লাগে। উৎপাদন খরচ কমে যায়। জমির ঊর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলন অনেক বেশি হয়। গাছের আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।’
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় জানান,‘ কমলগঞ্জ উপজেলায় ১২০হেক্টর জমিতে আগাম জাতের টমেটোর উৎপাদন হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’