হাত খরচের টাকা নিয়ে বিরোধে বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় উম্মে সালমা খাতুনকে (৫০) তারই ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রেখে দেয়। পরে কুড়াল দিয়ে আলমারি কুপিয়ে ডাকাতির চেষ্টা বলে সাজিয়ে বাসায় তালা দিয়ে বের হয়ে যায়।
ঘটনার পর গত সোমবার রাতে ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। হাত খরচের টাকা নিয়ে মায়ের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে র্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার র্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর এহতেশামুল হক খান গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার সাদ বিন আজিজুর রহমান দুপচাঁচিয়া দারুসসুন্নাহ কামিল মাদ্রাসার কামিল শ্রেণির ছাত্র এবং একই মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আজিজুর রহমানের ছেলে।
মেজর এহতেশামুল হক খান বলেন, গত ১০ নভেম্বর দুপুরে দুপচাঁচিয়া পৌর শহরের জয়পুরপাড়া এলাকায় ‘আজিজিয়া মঞ্জিল’ নিজ বাসার ডিপ ফ্রিজ থেকে গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত গৃহবধূ দুপচাঁচিয়া দারুসসুন্নাহ কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ও উপজেলা মসজিদের খতিব আজিজুর রহমানের স্ত্রী।
এই ঘটনায় এলাকায় ডাকাতিসহ হত্যা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর পরপরই র্যাব-সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং রহস্য উদ্ঘাটন ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে ছায়া তদন্ত শুরু করে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে কাহালু থানার আগোবাড়ি গ্রামে দাদার বাড়ি থেকে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সাদ বিন আজিজুর রহমান জানায়, হাত খরচের টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে মা উম্মে সালমার সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল। বাসা থেকে প্রায়দিনই ৫০০-১০০০ টাকা হারিয়ে যেত। এ নিয়ে মা তাকে বকা ঝকা করত।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন সকালে তার মা উম্মে সালমা খাতুনের সঙ্গে হাত খরচের টাকা নিয়ে কথার কাটাকাটি ও বাগ্বিতণ্ডা হয়। সাদ বিন আজিজুর রহমান রাগ করে সকালের নাশতা না খেয়ে দুপচাঁচিয়া দারুসসুন্নাহ কামিল মাদ্রাসায় ক্লাস করার উদ্দেশ্যে চলে যায়। মাদ্রাসায় বেলা ১১টায় ক্লাসের বিরতি হলে বাসার কাছাকাছি এলাকায় ঘুরে বেড়ায় এবং আনুমানিক সাড়ে ১২টার সময় বাসায় প্রবেশ করে দেখতে পান যে, তার মা বাসায় বটি দিয়ে মিষ্টি কুমড়ার তরকারি কাট ছিলেন।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার মায়ের পেছন দিক থেকে নাক-মুখ চেপে ধরে ধস্তাধস্তি শুরু করে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তার মা বাঁচার জন্য চেষ্টা করতে থাকলে হাতের তর্জনী আঙুলের নিচে তরকারি কাটার বটি লেগে হালকা কেটে যায়। পরে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নাক-মুখ দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে ভিকটিমের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে হত্যা নিশ্চিত করে।
পরে সাদ বিন আজিজুর রহমান মায়ের লাশের দুই হাত ওড়না দিয়ে বেঁধে বাসায় থাকা ডিপ ফ্রিজের ভেতর রেখে ঢাকনা লাগিয়ে দেয়। ঘটনাটি ডাকাতির ঘটনা হিসেবে সাজানোর জন্য বাসায় থাকা কুড়াল দিয়ে তার বাবা এবং মায়ের বেডরুমে থাকা আলমারিতে কয়েকটি কোপ মেরে কুড়াল সেখানে রেখে বাসার মেইন গেটে তালা দিয়ে বের হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পরে সে নিজেই আবার মেইন গেটের তালা খুলে বাসায় প্রবেশ করে তার বাবা আজিজুর রহমানকে মোবাইল ফোনে জানায় যে, মাকে বাসায় পাওয়া যাচ্ছে না। কথা বলার ৩-৪ মিনিটের মধ্যেই আজিজুর রহমান বাসায় চলে আসেন এবং বাসায় কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে শ্বশুরবাড়িতে ফোন করেন।
ফোন পেয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে লোকজনসহ প্রতিবেশী আরও অনেকেই বাসায় আসলে সাদ বিন আজিজুর রহমান সু-কৌশলে তার বাবা এবং দুই মামাকে দিয়ে ছাদে এবং বাসার ভেতরে সমস্ত জায়গায় খোঁজাখুঁজি করার অভিনয় শুরু করে।
একপর্যায়ে সাদ বিন আজিজুর রহমান নিজ হাতেই ডিপ ফ্রিজের ঢাকনা খুলে মায়ের লাশ বের করে। এরপর ডাকাত দল এই ঘটনা ঘটাতে পারে বলে সবাইকে জানায়।
উল্লেখ, গত রোববার উপজেলার ‘আজিজয়া মঞ্জিল’ বাসার ডিপ ফ্রিজ থেকে গৃহবধূ উম্মে সালমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের স্বামী দুপচাঁচিয়া দারুসসুন্নাহ কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ও উপজেলা মসজিদের খতিব আজিজুর রহমান। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে এবং মেয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান বাবা-মার সঙ্গে থাকতেন।