মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে হাতে কাজ কম থাকায় অলস সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে ঢোল-খোল সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজে জড়িত স্থানীয় শিল্পীদের।
আজ বুধবার (২ অক্টোবর) সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজার ঠিক আগ মুহূর্তে শ্রীমঙ্গলের সাগর দীঘির পাড় এলাকায় বাদ্যযন্ত্রের বাজার ঘুরে দেখা যায় কাঠের খুটখাট শব্দে মুখর থাকা পরিবেশে বিরাজ করছে নীরবতা।
সনাতনীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর শহরের বিভিন্ন মন্ডপে ঢাক-ঢোলের শব্দে মেতে উঠতে দেখা যায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। পূজাকে কেন্দ্র করে শেষ সময়ে বিরামহীন কাজে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যেত ঢাক ঢোলের কারিগরদের। কাউকে দেখা যেত চামড়া লাগাতে, কাউকে তৈরিকৃত খোলে রঙ লাগাতে, আবার কেউ কেউ ব্যস্ত থাকতেন পুরাতন বাধ্যযন্ত্র মেরামতের কাজে।
আধুনিক যন্ত্রপাতির আধিক্যে আগেরদিনের মত এখন আর এসব বাদ্যযন্ত্রের তেমন চাহিদা নেই। এছাড়া ঢাক-ঢোল তৈরির প্রধান উপকরণ যেমন, চামড়া, কাঠ ইত্যাদি কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন তেমন একটা লাভবান নন বলে জানান কারিগররা।
এই পেশার সাথে যুক্ত সহদেব ঋষি রেড বলেন, ‘পূর্ব পুরুষের পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এবং ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো চেষ্টা করছেন বাধ্যযন্ত্র তৈরীর সাথে জড়িত সকল শিল্পীরা। কিন্তু দিনবদলের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে ঢাক, ঢোল, তবলা, হারমোনিয়াম। এসব বাদ্যযন্ত্র বিক্রি করে ইদানিং যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে কাজের চাপ অনেকটা বৃদ্ধি পাবে বলে আশায় ছিলেন তাঁদের সকলেই। কিন্তু এবছর নতুন বাদ্যযন্ত্র বিক্রি হওয়া তো দূরের কথা, পুরাতন বাদ্য মেরামতের কাজও তেমন একটা হাতে আসে নি। এমতাবস্থায় দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন ও ব্যবসা পরিচালনার অন্যান্য খরচ কিভাবে বহন করবেন এই নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে আগে যেখানে দলবেঁধে ঢুলিদের অংশগ্রহণ দেখা যেত। সেখানে আধুনিকতার ছোয়ায় তাদের আর কদর নেই বললেই চলে। এছাড়া পুঁজির অভাবে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র এখন বিলুপ্তির পথে বলেও জানান তিনি।’
তাই নানাবিধ কারণে বংশানুক্রমিক এই পেশার সাথে নিয়োজিত শিল্পীরা বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। আবার নিরুপায় হয়ে পেশা পরিবর্তনের কথাও ভাবছেন তাদের অনেকেই।