রাজধানীর অভিজাত ও কূটনৈতিকপাড়া গুলশান-২ এর এক্সিম ব্যাংকের মহিলা শাখায় গভীর রাতে ডাকাতির চেষ্টাকালে ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ভবনটির নিরাপত্তারক্ষীরা জানায়, ডাকাতরা সংখ্যায় ছিল প্রায় ১৪০-১৫০ জন। তারা মাস্ক পরিহিত ছিল। তারা দলে দলে ভাগ হয়ে কয়েকদিক থেকে ওই ভবনের সামনে একত্র হয়ে হামলা চালায়। একপর্যায়ে তারা ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা দোতলায় এক্সিম ব্যাংকের মহিলা শাখায় গিয়ে কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ফেলে এবং গ্রিলের গেটটি কেটে ফেলে। এরপর তারা এটিএম বুথে ঢুকে ভাঙচুর করে এবং এটিএম বুথের মেশিন ভাঙার চেষ্টা করে কিন্তু সফল হয়নি। ফলে বুথ থেকে টাকা নিতে পারেনি বলে জানা গেছে। তবে নিরাপত্তারক্ষীদের মোবাইল ফোন, টাকা ও ভবন ব্যবস্থাপনা কক্ষে থাকা দুটি ল্যাপটপ এবং ৫০-৬০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।
মো. ইউনুস নামে এক নিরাপত্তারক্ষী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দৈনিক বাংলাকে বলেন, রাত ১টার দিকে ১০০-১৫০ লোক ভবনের সামনের প্রধান ফটক (মেইন গেট) ও সীমানা দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা বিল্ডিংয়ে ঢোকার আগে বাইরে থাকা ৭-৮টি সিসি ক্যামেরা ভেঙে নষ্ট করে দেয়। তাদের হাতে শটগানসহ বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র ছিল। এ ছাড়া তারা স্কচটেপ, তালা ভাঙা ও গ্রিল কাটার যন্ত্র নিয়ে এসেছিল। ভেতরে প্রবেশ করে প্রথমেই তারা নিরাপত্তারক্ষীদের মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয় এবং হাত বেঁধে মারধর শুরু করে। পরে তারা ভবনটির নিরাপত্তারক্ষীদের সুপাভাইজারকে খুঁজতে থাকে। এরমধ্যে কয়েকজন বন্ধ থাকা লিফটের চাবির কথা বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কারও কাছে চাবি না পেয়ে ডাকাতরা নিরাপত্তারক্ষীদের এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। ডাকাতরা আমাদের সবার মোবাইল ফোন ও সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা সব নিয়ে নেয়। তাদের মারধরে আমাদের নিরাপত্তারক্ষীদের তিনজনের হাতে গুরুতর আঘাত পান এবং একজনের চোখে গুরুতর আঘাত লাগে। এরমধ্যে একদল সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় এক্সিম ব্যাংকের গেটে পৌঁছে যায়। ওখানে কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা ব্যাংকের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করতে থাকে। একই সঙ্গে কয়েকজন ব্যাংকের এটিএম বুথের গ্রিল কেটে ভেতরে ঢুকে বুথের মেশিন ভাঙার চেষ্টা করে। তবে তারা মেশিন ভাঙতে না পেরে বুথে থাকা টাকা নিতে পারেনি।
এদিকে, ভবনটির উপ-ব্যবস্থাপক মো. মাইনুদ্দিন বলেন, ডাকাতরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে কয়েকদিক থেকে এসে বিল্ডিংয়ের সামনে একত্রিত হয়। ডাকাতরা ভেতরে প্রবেশ করে নিরাপত্তারক্ষীদের একত্র করে মারধর করতে থাকে। এ সময় নিরাপত্তারক্ষীদের সুপারভাইজার সিরাজ সুযোগ বুঝে বাইরে চলে আসেন। তিনি সাদা পোশাকে ছিলেন বলে ডাকাত দলের সদস্যরা তাকে চিনতে পারেনি। তখন রাত সোয়া ১টা, ভবন থেকে বের হয়েই সিরাজ আমাকে ফোন করে বলেন, স্যার প্রায় দেড়-দুইশ দুর্বৃত্ত বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়েছে। তারা সবাইকে বেদম মারধর করছে। কারও কারও হাত ভেঙে গেছে। এসব শুনে আমি তাকে কাছেই থাকা আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে খবর দিতে বলি।
তিনি আরও বলেন, সিরাজকে আর্মি ক্যাম্পে যাওয়ার কথা বলেই আমি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে বিস্তারিত জানাই। এরপর আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানাই এবং অফিসে আসার জন্য রওনা হই। ডাকাতরা প্রায় ১৫-২০ মিনিট ভেতরে তাণ্ডব চালায়। আমি আসার আগেই ক্যাম্প থেকে আর্মি ও গুলশান থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা চলে আসে। আর্মি ও পুলিশ সদস্যদের আসতে দেখে ডাকাতরা পালানো শুরু করে। এরমধ্যে নিরাপত্তারক্ষীরা ডাকাত দলের ৭ জনকে আটক করে ফেলে এবং দৌড়ে পালানোর সময় ৩ ডাকাতকে আর্মি ও পুলিশ ধরে ফেলে।
মাইনুদ্দিন জানান, ডাকাতরা ২টি মাইক্রোবাস, ১টি পিকআপ গাড়িসহ ১০-১৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছিল। তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় ৫টি মোটরসাইকেল ফেলে যায়। পরে পুলিশ মোটরসাইকেলগুলো জব্দ করে থানায় নিয়ে গেছে।
ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, মারধর করে নিরাপত্তারক্ষীদের সবার মোবাইল ফোন ও বেশ কয়েক হাজার টাকা নিয়ে গেছে। এ ছাড়া তারা সিঁড়ি দিয়ে ৪ তলা পর্যন্ত ওঠে। তারা বিভিন্ন অফিসের গেট ভাঙার চেষ্টা করে। অন্যদিকে নিচতলার বেজম্যান্টে থাকা বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (বিএমএস) রুম ও রিসেপশন রুমে ভাঙচুর করেছে। বিএমএস রুমে থাকা দুটি ল্যাপটপ ও ৫০-৬০ হাজার পেটি ক্যাশের টাকা নিয়ে গেছে।
নিরাপত্তারক্ষীদের প্রায় সবাই আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মোস্তফা ও বেলাল নামের দুজনের হাত প্রায় ভেঙে গেছে। নয়ন নামের একজনের হাতের তিনটি আঙুলে গুরুতরভাবে আঘাত লেগেছে। তাদের সবার চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমিরুল নামে এক রক্ষী চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তাকে চক্ষু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে হাতে প্লাস্টার ও ব্যান্ডেজ করা তিন নিরাপত্তারক্ষীকে এই প্রতিবেদকের সামনে নিয়ে আসেন।
গুলশান মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৌহিদ আহম্মেদ বলেন, রাতে খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। ওখান থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।