রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে যে পুলিশ বাহিনী, তারা কেন মাঠে নেই, এমন প্রশ্ন এখন অনেক মানুষের মুখে মুখে। পুলিশ না থাকার সুযোগে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে ঢাকা ও বাইরের জেলাগুলোতে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন দেশব্যাপী আন্দোলনের সময় একের পর এক গুলি ও মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ছিলেন পুলিশের অনেক সদস্য। সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনা ছিল রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে পুলিশ কর্তৃক গুলি করে হত্যার ঘটনাটি। সেই ভিডিও ঝড় তোলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের একটা পর্যায় নাগাদ পুলিশ উল্লেখযোগ্য সহিংসতায় জড়ায়নি, তবে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ অনেকের অভিযোগ, সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ শিক্ষার্থীদের ভয় দেখাতে বিভিন্ন জায়গায় গুলি করেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের দিন ৫ অক্টোবরও ঘটে ভয়াবহ ঘটনা। ওই দিন দেশের অন্তত ১০০টি থানায় হামলা-ভাঙচুর হয়। সেদিনও আত্মরক্ষার্থে পুলিশের কিছু সদস্য গুলি ছোড়েন। তাতে কয়েকটি থানায় ব্যাপক রক্তপাত হয়।
রাজধানীর উত্তরা পূর্ব, যাত্রাবাড়ী থানাসহ বেশ কয়েকটি থানায় প্রাণহানি হয় সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্যদের।
এমন বাস্তবতায় প্রাণহানি ও হামলার শঙ্কায় বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য গা ঢাকা দিতে বাধ্য হন, তবে চাকরির নিয়ম অনুযায়ী এভাবে থাকার সুযোগ নেই তাদের।
এদিকে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশের উচ্চ পদে হয়েছে ব্যাপক রদবদল। নতুন করে আইজিপি করা হয়েছে মো. ময়নুল ইসলামকে। তিনি বুধবার নির্দেশনা দিয়েছেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের কাজে যোগদানের। এর পরও পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি।
কর্মস্থল যোগদান না করার অন্যতম কারণ জানতে পেরেছে এই প্রতিবেদক। সংবাদমাধ্যমটির কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংস্কার চেয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন।
পুলিশের ওই কর্মীদের ১১ দফা দাবির তালিকা এসেছে নিউজবাংলার কাছে। এসব দাবিতে পুলিশ সদস্যরা উল্লেখ করেছেন, ওপরের নির্দেশনা মেনেই তাদের জনতার মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে।
গত মঙ্গলবার ‘অধস্তন পুলিশ সংস্কার প্ল্যাটফর্ম’ নামে করা ১১ দফা তৈরি করে পুলিশের সব স্তরে পাঠানো হয়েছে বলে জানান কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা, তবে সেই দাবিগুলো কারা কোথা থেকে দিয়েছে, তেমন কিছু উল্লেখ নেই। কোনো পুলিশ সদস্যের নামও উল্লেখ নেই সেখানে।
ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব দাবি পুলিশের সব অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীর। সেখানে বলা হয়, ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের ওপর যে হামলা-নির্যাতন করা হয়েছে তা ছাত্ররা করেনি।
১১ দফা দাবির প্রথমটিতে বলা হয়েছে, ছাত্র আন্দোলনে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে।
যেসব পুলিশ নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ, আজীবন রেশন-পেনশন দেয়ার কথা রয়েছে দ্বিতীয় দাবিতে।
এসআই ও সার্জেন্ট নিয়োগ পিএসসির অধীনে এবং কনস্টেবল নিয়োগ শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে হতে হবে বলে দাবি করা হয়েছে।
পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী পুলিশের জন্য কর্মঘণ্টা কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ছুটি ও ওভারটাইম নিশ্চিত করার দাবিও করা হয়েছে।
৯ নম্বর দাবিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পুলিশকে যেন কোন রাজনৈতিক সরকার তাদের কর্মী হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, তেমন ব্যবস্থা তৈরি করা। সে জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করার দাবিও রয়েছে। আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি থানা ও ব্যারাকগুলোকে আধুনিক করে গড়ে তোলার দাবি করা হয়েছে শেষ দুটি দফায়।
কর্মস্থলে যোগদান না করার বিষয়ে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তারা মুখ খুলতে রাজি হননি।