“আমরা খেটে খাই, রোদ-বৃষ্টিতে কিছু হয় না। সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। যখন খুব বেশি বৃষ্টি হয়, তখন ছাতাতেও কাজ হয় না। কাজ না থাকলে মানুষ বের হয় না। যে দুই-চারজন বের হয়, বৃষ্টিতে ভিজে গন্তব্যে পৌঁছায়, তখন দশ টাকা বেশি চাই। কেউ দেয়, কেউ দেয় না। জ্বর হলে ওষুধ খেয়ে পরদিন সকালে আবার রিকশা নিয়ে বের হই। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে,” বলছিলেন শিববাড়ি গোবরচাকা এলাকার রিকশাচালক রনি।
খুলনায় শুক্রবার থেকে টানা বৃষ্টির কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি—সবখানেই পানি জমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কর্মজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত কখনও ভারি, কখনও হালকা বৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, খুলনা মহানগরীর রয়েলের মোড়, শিববাড়ি, সোনাডাঙ্গা, ২৫০ বেড হাসপাতাল সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। এছাড়াও গরীব টুটপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, আহসান আহমেদ রোডসহ অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অনেক সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় পথচারী ও যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও সাময়িকভাবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফারজানা মিম বলেন, “গত বৃহস্পতিবার বাড়ি গিয়েছিলাম। বৃষ্টির কারণে ফিরতে পারছিলাম না। আজ ক্লাস থাকায় আসতেই হলো। নদী পার হয়ে এসে দেখি রাস্তায় অনেক ময়লা পানি। পিটিআই মোড় থেকে রয়েল মোড় পর্যন্ত খুব খারাপ অবস্থা। তাছাড়া ইজিবাইকে বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে। সবমিলিয়ে খুব বিরক্তিকর একটা অবস্থা।”
রূপসা থেকে রয়েল মোড় পর্যন্ত যাওয়া অটোচালক রাজ্জাক বলেন, “বিদেশ থেকে ফিরে এসে এখন অটো চালাচ্ছি। চারজনের পরিবার আমার। সারাদিন চালিয়ে যতটুকু আয় হয়, তা দিয়ে কোনো রকমে দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ আর সংসার চালাই। এখন যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে শুনছি ডেঙ্গুতে মানুষ মরছে। তাই খুব প্রয়োজন না হলে কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। যাত্রী না থাকায় দিনশেষে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”
পাইওনিয়ার কলেজে পরীক্ষা দিতে আসা বি.এল. কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী শিমুল কুমার বলেন, “সারাদিন বৃষ্টি। আসতে আসতে একটু ভিজেও গেছি। তারপর কিছু কিছু জায়গায় সড়ক কাজের জন্য যানজট হয়েছে। রাস্তায় পানি জমে থাকার কারণে চলাচলে বেশি সমস্যা হচ্ছে।”
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বলেন, “বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ৩৬ ঘণ্টায় খুলনায় ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।”