ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এতে আছে মানুষের জীবনের সব বিষয়ের সমাধান। একজন অপরজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে কীভাবে অভিবাদন জানাবে, তাও রয়েছে। সালাম ইসলামে সর্বোত্তম ও একমাত্র অভিবাদন। সালাম দেয়া-নেয়া নবী-রসুলদের সুন্নত। মহান আল্লাহ আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে সর্বপ্রথম সালামের শিক্ষা দেন। তিনি সালাম দিলে ফেরেশতারাও উত্তর দিতেন।
আমাদের সমাজে অনেককে দেখা যায়, বাবা-মাকে বা নতুন বিয়ে করলে গণহারে কদমবুসি করেন। পায়ে ধরে সালাম করেন। ইসলামে এভাবে পা ছুঁয়ে সালাম করা কি জায়েজ?
পা ছুঁয়ে সালাম করা ইসলামি সংস্কৃতি নয়। ইসলামে সালাম বলতে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বুঝায়। ইসলামে উত্তমভাবে সালাম ও সালামের উত্তর দেয়ার কথা রয়েছে। সাহাবায়ে কেরামরা নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলেই সালাম দিয়েছেন। পায়ে ধরে সালাম করেননি। সুতরাং এটি আমাদের করা কোনোভাবেই উচিত নয়। হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম’। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলে লোকটি বসল। তারপর নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ‘দশ’। তারপর অপর এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।’ নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দেয়ার পর লোকটি বসল। তার সম্পর্কে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ‘বিশ’। তারপর অপর এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন ‘ত্রিশ’। (আবু দাউদ: ৫১৯৫; তিরমিজি: ২৬৮৯)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তোমাদের সালাম দেয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে পূর্ণ হিসাবকারী।’ (সুরা নিসা: ৮৬)
হাদিসে বড়জোর মুসাফাহা-মুআনাকার কথা এসেছে; কিন্তু কদমবুসির কথা আসেনি। আনাস রা. বলেন, এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসুল! আমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি যখন তার কোনো ভাই বা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তখন সে কি মাথা ঝুঁকাবে বা তাকে জড়িয়ে ধরবে বা চুমু খাবে? তিনি বললেন, না। লোকটি বলল, তাহলে কি কেবল হাত ধরবে ও মুসাফাহা করবে? নবীজি বললেন, হ্যাঁ৷ (তিরমিজি: ২৭২৮; ইবনে মাজাহ: ৩৭০২)
রসুল সা. মাথা ঝুঁকাতে নিষেধ করেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, পা ছুঁয়ে ‘সালাম’ করার সময় সাধারণত মাথা ঝুঁকে যায়। আর রুকুর কাছাকাছি হয়ে সালামের জন্য ইশারা করা, ঝুঁকে পড়া এসব মাকরুহ। (সাকবুল আনহুর ৪/২০৫) উল্লিখিত সব কটি হাদিসই প্রমাণ করছে কদমবুসি ইসলামি সংস্কৃতি নয়। যদিও কেউ কেউ কদমবুসি বা পদচুম্বনকে সম্মানসূচক জায়েজ বলেছেন। সাথে অবশ্য এ শর্তও দিয়েছেন যে, ‘যদি রুকু বা সেজদার সুরত হয়, তাহলে তা জায়েজ হবে না। (আলমুজতাবা: ৪/২০৫, আলমুহিতুল বুরহানি: ৮/১১৮, ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ৫/৩৬৯)
তবে মুহাক্কিকিনদের মতে তা জায়েজ নয়। কারণ বর্তমান প্রচলিত কদমবুসিতে রুকুর হালত এবং সেজদার হালত হওয়া স্পষ্ট। সেই সঙ্গে এটি ইসলামি সংস্কৃতি নয়। তাই সালামের এ নতুন পদ্ধতি থেকে বিরত থাকতে হবে।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ ছাড়া কারো সামনে মাথা ঝুঁকাতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং বর্তমান সমাজে প্রচলিত পা ছুঁয়ে সালাম বা কদমবুচি করা মাকরুহ। বিশেষত সালামের সময় কারো সম্মানে মাথা ঝোঁকানো শরিয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। (আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৪৫, রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৮৩)