ভারতের কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের খাস কামরায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আজ বুধবার জবানবন্দি দেন তিনি।
খুলনা অঞ্চলের এক সময়ের দুর্ধর্ষ চরমপন্থী সন্ত্রাসী শিমুল বিশ্বাসসহ তিনজনকে এর আগে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অপর দুজন ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এমপি আনার হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র এএসপি মাহফুজুর রহমান আজ বুধবার দুপুরের দিকে আমানুল্লাহকে আদালতে হাজির করেন।
আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, আসামিকে রিমান্ডে নেয়ার পর তিনি এমপি আনার হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করে। ঢাকার আদালতের শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জালাল উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
একই মামলায় গ্রেপ্তার ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া এর আগে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে জবানবন্দি দেন। এই তানভীর ভূঁইয়া হলেন শিমুল ভূঁইয়ার ভাতিজা। আর সোমবার রিমান্ড চলাকালীন শিলাস্তি রহমানও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এই তিন আসামির প্রথমে আটদিন এবং পরে পাঁচদিন করে মোট ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার আনার হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার ও পলাতক ১০ আসামির ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দিতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্সকে আদেশ দিয়েছে আদালত।
জানা যায়, এ বছরের ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। ভারতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন তিনি। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন আনার। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের বরাহনগরের বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পাঁচদিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এই সংসদ সদস্যের।
চারদিন পর হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পাশের নিউটাউন এলাকায় সঞ্জিভা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে সংসদ সদস্য আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে সেখানে মরদেহ মেলেনি।
এরপর এই হত্যাকাণ্ড তদন্তে নামে ভারত ও বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। তিনজন গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশে। আর কলকাতায় গ্রেপ্তার হন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদ। জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ড দিয়েছে ভারতের বারাসাতের আদালত।
আনার হত্যাকাণ্ডের আরেক অন্যতম সন্দেহভাজন সিয়াম পালিয়ে নেপালে যাওয়ার পর সেখানকার পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তিনি সে দেশেই আটক রয়েছেন।