প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কল-কারখানা মালিকদের প্রতি বিলাসিতা কিছুটা কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ বুধবার দুপুরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ঐতিহাসিক মহান মে দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে শ্রমিকরা তাদের কঠোর শ্রম দিয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে মালিকদের জীবন জীবিকা উন্নত করা অথবা বিলাসবহুল জীবন যাপনের সুযোগ করে দিচ্ছে সেখানে তারা বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের দিকে বিশেষভাবে নজর দেবেন সেটাই আমি চাই।’
সরকার প্রধান বলেন, আমি জানি বাংলাদেশে কিছু ভাড়াটে লোক কথায় কথায় শ্রমিকদের নিয়ে রাস্তায় নামার চেষ্টা করে। এখন যে কারখানা আপনাদের ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা করছে কাজের ব্যবস্থা করছে জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করছে এই কারখানা নিজেরা যদি ধ্বংস করতে যান, ভাঙচুর করেন তাহলে ক্ষতিটা কার হচ্ছে? এতে নিজের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, পরিবারের ক্ষতি হচ্ছে তেমনি দেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। মালিকদেরও ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু মালিকদের তো আর একটা ব্যবসা থাকে না আরও অনেক ব্যবসা থাকে। তারা হয়তো ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু আপনাদের নিজেদের ক্ষতি তো আপনারা নিজেরা করেন।
তিনি আরও বলেন,‘আপনাদের যদি কোন অসুবিধা হয়, আমার দুয়ার আপনাদের জন্য সবসময় খোলা। আপনার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সেগুলো আমরা দেখব এবং আমাদের শ্রমিক সংগঠন ও রয়েছে।’
শ্রমিকদের শুধু নয় কৃষক, এমনকি বর্গা চাষীদের বিনা জামানতে ঋণ প্রদানের সুযোগ তার সরকার করে দিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, শিশু শ্রম বন্ধের উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। আজকে শতকরা ৯৮ শতাংশ শিশু স্কুলে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের বৃত্তি দিচ্ছি, খাবারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। বিনা মূল্যে বছরের প্রথম সপ্তাহে বই দিচ্ছি এবং কারিগরি ও ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য ব্যাপকহারে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এটা আগে ছিল না, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরা করেছি। যাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমাদের বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ নেমে এসেছে। যা প্রায় ২ থেকে ৩ গুণ বেশি ছিল। কর্মসংস্থান ব্যাংকের উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য যুবকদের বিনা জামানাতে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করেছি।
সরকার প্রধান বলেন, ‘কোন সমস্যা হলে সেটা বলবেন কিন্তু কারো প্ররোচনায় বা কারো উস্কানিতে যেটা থেকে নিজের রুটি-রুজি ও ভাত কাপড় আসবে সেটাকে যেন ধ্বংস করা না হয়। সেটার প্রতি আপনারা অবশ্যই যত্নবান বান হবেন। আর মালিকদেরকে বলবো আপনারা আপনাদের বিলাসিতার কিছু অংশ ছেড়ে দিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণ দেখবেন।’
তিনি এ সময় ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, এখন তো সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। কাজেই আপনারা যদি পণ্য মূল্য কিছুটা বাড়িয়ে দেন, তাহলে আমি নিজেও মালিকদের আরও চাপ দিতে পারি আমাদের শ্রমিকদের সুবিধা দেওয়ার জন্য। আমি আশা করি আইএলও শুধু শ্রমিক নয়, মালিকদের এই বিষয়ও দেখবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও নারীরা পুরুষের সমান মজুরি পায় না কিন্তু বাংলাদেশে পাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের কর্মজীবী মহিলার সংখ্যা ৪৩.৪১ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ছিল মাত্র ২২.৮১ ভাগ। এখন মেয়েরা সর্বক্ষেত্রে কাজ করতে পারছে, সে সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে কয়েকটি শ্রমিক পরিবারের নিকট আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তর করেন। পরে তিনি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এইচ এম ইব্রাহিম, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তুওমো পুতিয়ানেন, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি আরদাশির কবির ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।