সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ ৫৫ তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত। উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপনে এরই মধ্যে শেষ হয়েছে স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। রংতুলির আঁচড়ে এবং বাহারি রংয়ের ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে।
সবুজে ঘেরা ১০৮ হেক্টর জমির ওপর নির্মিত স্মৃতিসৌধকে ধুয়ে মুছে পরিপাটি করে রেখেছেন। সৌন্দর্যবর্ধনসহ নানা কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছেন সাভার গণপূর্ত বিভাগ। রংতুলির আঁচড় পড়েছে পায়ে চলার পথ ও বেদি সংলগ্ন সিঁড়িগুলোতে। সবুজ ঘাসের গালিচা কেটেছেঁটে নান্দনিক করে তোলা হয়েছে। পুরোনো ফুলের চারা উপড়ে ফেলে লাগানো হয়েছে নতুন বাহারি রঙের গাছ। হাজারো ফুটন্ত ফুল ফুটে আছে টপগুলোতে। ভবনসহ উঁচু গাছে ঝুলানো হয়েছে লাল সবুজের আলোকবাতি। প্রবেশ পথে তৈরি করা হয়েছে উৎসবের ফটক।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইনচার্জ সাভার গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পুরো স্মৃতিসৌধ চত্বর ধুয়ে মুছে পরিষ্কার-পরিপাটি করা হয়েছে। পুরো চত্বরে ফুল দিয়ে সাজানো, রং–তুলির কাজ, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, আলোকসজ্জা, লেক সংস্কারসহ সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রায় দেড় মাস ধরে চলা এ কার্যক্রমে শতাধিক কর্মী অংশ নিয়েছেন। নিরাপত্তার লক্ষ্যে ১৬ মার্চ থেকে স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের প্রবেশ সংরক্ষিত করা হয়েছে। ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর স্মৃতিসৌধ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তখন ঢল নামবে লাখো জনতার।
রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতার সব মহড়াও সম্পন্ন হয়েছে। মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে পুরো এলাকা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।
দিবসটির প্রথম প্রহরে জাতির বীর সন্তানদের শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তাদের দেওয়া হবে তিন বাহিনীর গার্ড অব অনার।
এছাড়াও, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক দলের নেতা, সামাজিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করবেন। শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর জাতীয় স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, জাতীয় স্মৃতিসৌধের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ২৬ মার্চ ভোরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবেন। এরপর সাধারণ জনগণের জন্য মূল ফটক খুলে দেয়া হবে। তবে, নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রাথমিকভাবে সৌধ এলাকায় প্রবেশাধিকার সীমিত রাখা হয়েছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান জানান, স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি ৪ স্তরের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছে তিন সহস্রাধিক সদস্য। গোটা এলাকায় বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহীনুর কবির বলেন, ‘মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের লক্ষ্যে প্রায় চার হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাভার উপজেলার আমিন বাজার থেকে শুরু করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ১২টা সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। সেক্টর অনুসারে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এই পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে।’
তিনি ২৬ মার্চ ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের এ অঞ্চল দিয়ে যানবাহন না চালাতে অনুরোধ করেন। এই সময়ে পরিবহন চালকদের প্রতি বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে বলেন তিনি।
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। শহরের উঁচু ভবনসহ নানা স্থাপনায় শোভা পাচ্ছে লাল সবুজের আলোকসজ্জা।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুবকর সরকার জানান, ৫৫ তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে উৎসবের নানা রং দিতে কাজ করেছে। সাজানো হয়েছে শহরকে।