বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১০:৩২ অপরাহ্ন

বিশাল অঙ্কের টাকায় রফাদফায় আবার চালু হাসপাতাল

নিউজ ডেস্ক / ১১১ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

পাবনার ঈশ্বরদীতে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়া আলো জেনারেল হাসপাতাল আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই রোগীর স্বজন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে হাসপাতালটি চালু করে দেওয়া হয়েছে। তবে রফাদফার বিষয়টি রোগীর স্বজনরা স্বীকার করলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা অস্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি ঈশ্বরদী পৌর এলাকার ফজলে রাব্বির অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অন্তরা খাতুনকে আলো জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিনই সন্ধ্যায় হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডা. মাসুমা আঞ্জুমা ডানা এবং তার স্বামী ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা ডা. শফিকুল ইসলাম শামীমের তত্ত্বাবধানে সিজার অপারেশন করা হয়। এ সময় রোগীর অবস্থা আশঙ্কজনক হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বিচার চেয়ে গত ১০ জানুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন তারা। হাসপাতালের সামনে ওই মানববন্ধনে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক কর্মচারীর নেতৃত্বে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজন তাদের ওপর হামলা করেন এবং মারধর করেন।

পরে ঈশ্বরদী থানা ও ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। ওই দিনই বিষয়টি নজরে এলে হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষণা করেন পাবনা সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে গঠন হওয়া পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি ওই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির প্রমাণ পায়। তদন্ত প্রতিবেদন ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

এরই মধ্যে বন্ধ ঘোষণার মাত্র দেড় মাসের মাথায় এক সপ্তাহ আগে হাসপাতালটি আবার খুলে দেওয়া হয়। অপারেশন ছাড়া সব কার্যক্রমই চলছে সেখানে। আদালতে মামলা দায়েরের মাত্র এক মাস পরেই আবার মামলা তুলে নেওয়া এবং কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই হাসপাতালটি খুলে দেওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি বলেন, মাঝেমধ্যেই এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এবার হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আশপাশের লোকজন স্বস্তি পেয়েছিল। কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই আবার চালু হয়ে গেছে। হাসপাতালের লোকজন বলছে, অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে হাসপাতালটি চালু করা হয়েছে। টাকা-পয়সা নেওয়ার কথা প্রকাশ্যে স্বীকারও করছেন রোগীর স্বজনরা।

বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনের মাধ্যমে মামলা দায়েরের পর কেন মামলা তুলে নিলেন এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি মামলার বাদী মৃত রোগীর শাশুড়ি জান্নাতুল ফেরদৌস রুনু। তবে রফাদফার বিষয়টি স্বীকার করেন মৃত রোগীর স্বামী ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ নানান ব্যক্তিরা চাপ দিচ্ছিল। নানান কারণে নানা ঝামেলা মনে করে মীমাংসা করেছি। আমার শাশুড়িকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছে আর হাসপাতালের ৪০% আমার মেয়ের নামে লিখে দেবে।’

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে হাসপাতালটিতে গেলেও কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। পরে অভিযুক্ত ডা. শফিকুল ইসলাম শামীমের কার্যালয়ে গেলে সাংবাদিকদের ধাক্কা দিয়ে তিনি দ্রুত সেখান থেকে সটকে পড়েন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও স্থানীয় সংসদ সদস্য গালিবুর রহমান শরীফের মন্তব্য নেওয়াও সম্ভব হয়নি।

এদিকে টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পাবনা সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান। তিনি বলেন, ‘ঘটনা তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য বিভাগের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখায় জমা দেওয়া হয়েছে। আর হাসপাতালটি সাময়িকভাবে যে বন্ধ রেখেছিল সেটা খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই ডাক্তারদের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। আর বলে দেওয়া হয়েছে, তারা কোন কোন কাজ করতে পারবে আর পারবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু সমস্যা তো আছেই, তা না হলে তো আর অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হতো না, ওদের গাফিলতি ছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া তো আর আমার হাতে থাকে না। ওগুলো স্বাস্থ্য বিভাগ দেখবে। লেনদেনের বিষয়টা মিথ্যা আর অভিযোগকারী নারীর মামলা তুলে নেওয়ার স্ট্যাম্প আমাদের কাছে আছে। মামলা কেন তুলে নিলেন এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি বাদী।’


আরো সংবাদ পড়ুন...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর