যে ভাষার জন্য রক্ত ঝরিয়েছেন সালাম, বরকতের মতো তরুণ প্রাণ, তাদের স্মরণে তৈরি শহীদ মিনারের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে অসচেতনতা আর অব্যবস্থাপনার কাছে। অথচ এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগরে প্রধান শহীদ মিনারটি সারা বছর সিএনজি অটোরিকশার দখলে থাকে। পরিবহনশ্রমিক ও সাধারণ মানুষজন শহীদ বেদির পাশে মলমূত্র ত্যাগ করে পুরো শহীদ মিনার এলাকাকে দুর্গন্ধময় করা তুলেছে। এ সমস্যার সমাধানে স্থানীয় প্রশাসন বা উপজেলা প্রশাসন কোনো উদ্যোগই নিচ্ছে না।
জাতীয় দিবস আসলে এক দিনের জন্য কেবল ভাষা প্রেমের চেতনা জাগ্রত হয়। তখন আগের দিন এ শহীদ মিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। আর বাকি সারা বছর থাকে বেহাল অবস্থা।
গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিন শমশেরনগর প্রধান শহীদ মিনার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহীদ মিনারের দেয়ালের ভিতরে শহীদ বেদি পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি সিএনজি অটোরিকশা রাখা। আর এসবের ফাঁক-ফোকরে গিয়ে পরিবহনশ্রমিক ও সাধারণ মানুষজন মূত্র ত্যাগ করছেন। এ শহীদ মিনার এলাকার পুরো নিয়ন্ত্রণ যেন সিএনজি অটোরিকশাচালক সমিতির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা বলেন, সাধারণ মানুষজন এ নিয়ে জোরালোভাবে কোনো প্রতিবাদ করে না। তারা ভয়ে পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে অহেতুক সমস্যায় জড়াতে চায় না।
শহীদ মিনার সংলগ্ন বাসার মালিক বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী সেলিম চৌধুরী বলেন, এখানে সিএনজি স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় শহীদ মিনার চত্বর এখন তাদের দখলে। এমনকি শহীদ মিনার রেলওয়ে স্টেশনের সরু সড়কেও অসংখ্য সিএনজি অটোরিকশা রাখায় মানুষজনের চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। শহীদ বেদির দুই দিকে দিনে-দুপুরে মূত্র ত্যাগ করা হয়, যা দৃষ্টিকটু। তাই তিনি নিজ ব্যয়ে শহীদ মিনারের উত্তর দিকের দেয়াল আরও ৩ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করে দিয়েছেন। তিনি মনে করেন এদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
শমশেরনগর উত্তর বাজার সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডের চালক সমিতির সভাপতি মোস্তফা মিয়া বলেন, ভাষা দিবস এলে এক দিন আগে তারা এ এলাকাকে সিএনজি মুক্ত করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেন। এবারও দুই/ এক দিনের মধ্যে সিএনজি অটোরিকশা সরিয়ে স্থানটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে। বাজার এলাকায় আলাদা জায়গা না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে শহীদ মিনারের খালি জায়গায় সিএনজি অটোরিকশা রাখছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়নাল আবেদীন বলেন, বিষয়টি দেখার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।