মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৯ পূর্বাহ্ন

কমলগঞ্জে পল্লী চিকিৎসকদের জমজমাট ব্যবসা

ডেস্ক রিপোর্ট / ৪৬ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় পল্লী চিকিৎসকদের জমজমাট ব্যবসা শুরু হয়েছে। স্ব স্ব চেম্বারে ইচ্ছেমতো রোগী দেখে এন্টিবায়োটিক থেকে শুরু করে সবধরণের ঔষধও লিখছেন। একজনের চিকিৎসায় রোগীর শরীরে কাঁপুনি দেখা দেয়। আরেকজনের খৎনা করানোর পর শিশুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে দুই রোগীকেই সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এসব চিকিৎসকদের কারনে রোগীদের নানা ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও দেখার কেউ নেই।

এভাবে কমলগঞ্জ উপজেলায় অসংখ্য পল্লী চিকিৎসক রোগীদের জিম্মি করে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের শিংরাউলী গ্রামের ৪২ বছর বয়সের বিটু মিয়া বলেন, ‘আমার সর্দি, জ্বরের কারনে সোহেল আহমদের কাছে যাই। সবকিছু শুনে তিনি আমাকে যে ঔষধ দেন সেগুলো খেয়ে হাত, পায়ে টানাপোড়েন ও শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়। সমস্যা দ্রুত বেড়ে যেতে থাকে। পরে স্থানীয় শমশেরনগর হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাকে দ্রুত রেফার করেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে আমি শারীরিক ও আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’

স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, সোহেল আহমদ কিছুদিন স্থানীয় একটি ফার্মেসীতে কর্মচারী হিসাবে কাজ করেন। তারপর কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নন কমিউনিকেবল ডিজেজ (এন.সি.ডি) প্রজেক্টের মাধ্যমে ছয় মাসের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধীনে ঐ প্রজেক্টে মাঠকর্মীদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় প্রাথমিক ধারনা, প্রেসার ও ডায়াবেটিস মাপার কৌশল শিখানো হয়। সেখান থেকে বের হয়েই নিজেকে ডিপ্লোমা ডাক্তার পরিচয়ে শমশেরনগরে নিজের ফার্মেসীর সাথে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। সাইনবোর্ডে লেখা ডাক্তার সোহেল আহমেদ আর.এম.পি এবং ডি.এম.এস (ঢাকা) জেনারেল ফিজিশিয়ান এন.সি.ডি কর্নার, সহকারী (এক্স) ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমলগঞ্জ।

কমলগঞ্জের চর্ম ও যৌন রোগের প্রাইভেট ডাক্তার সৈয়দ কুতুব নাহিদ (এমবিবিএস) বলেন, ‘সোহেল আহমদ সরকারি হাসপাতালের নাম ব্যবহার করে ইচ্ছেমতো এন্টিবায়োটিক ঔষধও লিখছেন। যা মোটেও ঠিক নয়। সম্প্রতি তার ঔষধ খেয়ে এক রোগীর সমস্যা দেখা দিলে তাকে দ্রুত সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করতে হয়েছে। এধরণের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।’

তবে অভিযোগ বিষয়ে সোহেল আহমেদ বলেন, ‘আমি কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনএসডিতে সহকারী হিসেবে আগে কর্মরত ছিলাম। তাছাড়া অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে সনদপত্র নিয়ে চিকিৎসা শুরু করি। আমার চিকিৎসায় কারো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারো সমস্যা হলে আমাকে জানানো উচিত ছিল। কেউ কেউ বিরোধীতা করার জন্য এমন করতে পারে।’

অপরদিকে শমশেরনগরের রেল কর্মচারী সুজন মিয়া বলেন, ‘গত ১২ নভেম্বর শমশেরনগরে কামরুজ্জামান শিমুর কাছে আমার সন্তানকে খৎনা করানোর পর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। কোনমতেই রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। মৌলভীবাজার হাসপাতালেও সন্তানকে রাখেনি। দ্রুত সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে চিকিৎসায় ভালো করেছি। আল্লাহ মৃত্যুর হাত থেকে আমার সন্তানকে বাঁচিয়েছেন।’

করোনাকালীন সময়ের আগে পল্লী চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে ভুয়া সনদপত্র বিতরণের অভিযোগও রয়েছে কামরুজ্জামান সিমুর বিরুদ্ধে।

তবে অভিযোগ বিষয়ে কামরুজ্জামান সিমু বলেন, ‘খৎনা করানো বাচ্চার রক্তে সমস্যা ছিল। যে কারনে রক্তক্ষরণ হয়। পরে বিজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নিজে যুক্ত থেকে বাচ্চাকে নিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করে সুস্থ্য হয়েছে এবং বিষয়টি সমাধানও হয়েছে।’ তাছাড়া করোনার সময় থেকে প্রশিক্ষণ বাদ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলাম ভূঁইয়া বলেন, সোহেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এন.সি.ডি কর্ণারে প্রজেক্টের মাধ্যমে নিয়োজিত ছিল। তবে প্যাডে কিংবা সাইনবোর্ডে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম ব্যবহার করা ঠিক নয়। কামরুজ্জামান শিমুর বিষয়েও কোন অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রহমান বলেন, ‘এধরণের সমস্যায় অভিযোগ পাওয়া গেলে সুবিধা হতো। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবো।’

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, বিষয়টি যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরো সংবাদ পড়ুন...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর